যোগমায়া আচার্য
প্রতিটি শ্বাস যখন জীবনের আশা বহন করে, তখন ফুসফুসের স্বাস্থ্যই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার মৌলিক ভিত্তি। বিশ্বজুড়ে এই বার্তা পৌঁছে দিতে প্রতি বছর ১ আগস্ট পালিত হয় World Lung Cancer Day। দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় ফুসফুস ক্যানসারের ভয়ঙ্কর বাস্তবতা এবং এই রোগের প্রতিরোধ, নির্ণয় ও চিকিৎসার গুরুত্ব।
ফুসফুস ক্যানসার বিশ্বব্যাপী ক্যানসারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। এটি পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এবং প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এই মারণরোগে প্রাণ হারাচ্ছেন। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এর প্রাথমিক উপসর্গ অনেক সময় উপেক্ষিত থাকে, ফলে রোগ শনাক্ত হয় অনেক দেরিতে। এর ফলে চিকিৎসার সুযোগও অনেক কমে যায়।
ধূমপান ফুসফুস ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ। সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণের ফলে ফুসফুসে ক্ষতিকর রাসায়নিক জমে গিয়ে কোষের জেনেটিক গঠন পরিবর্তিত হয়, যা ক্যানসারে রূপ নেয়। শুধু ধূমপানই নয়, দীর্ঘদিন বায়ু দূষণের মধ্যে বাস, প্যাসিভ স্মোকিং বা রেডন গ্যাসের সংস্পর্শ, কিছু পেশাগত রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদিও ফুসফুস ক্যানসারের কারণ হতে পারে। এমনকি যারা কখনও ধূমপান করেননি, তারাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
বিশ্ব ফুসফুস ক্যানসার দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো—মানুষকে সচেতন করা যে এই রোগ এড়ানো এবং প্রতিরোধ করা সম্ভব। সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো সচেতনতা। ধূমপান বন্ধ করা, দূষণের বিরুদ্ধে সর্তকতা অবলম্বন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গকে অবহেলা না করা—এই সহজ বিষয়গুলিই ফুসফুস ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সহায়ক।
বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অগ্রগতির ফলে ফুসফুস ক্যানসারের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে, যেমন—সার্জারি, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপি। তবে চিকিৎসার সাফল্য নির্ভর করে রোগের ধাপ এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক—পরিবেশ ও ফুসফুস দুটিকেই রক্ষা করার। ফুসফুস ক্যানসার শুধু একজন রোগীর নয়, গোটা পরিবারের জীবনে আঘাত হানে। তাই প্রতিটি পরিবারে গড়ে উঠুক স্বাস্থ্যবান শ্বাসের পরিবেশ। বন্ধ হোক ধূমপান, স্বচ্ছ হোক বাতাস, সুরক্ষিত থাকুক ফুসফুস।
World Lung Cancer Day যেন শুধুই একটি তারিখে সীমাবদ্ধ না থাকে। এটি হোক জনসচেতনতার এক শক্তিশালী বার্তা, যার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ নিজেকে এবং তার চারপাশের মানুষদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়। শ্বাস নেয়ার এই সহজ অথচ মহামূল্যবান অধিকার রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের।