নরেন্দ্রনাথ কুলে
চন্দ্রায়ন-3 অভিযান স্মরণে 'জাতীয় মহাকাশ দিবস' পালনে হিমাচলপ্রদেশের একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর 'হনুমান' কে পৃথিবীর প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে ছাত্রদের কাছে পরিচয় দিয়েছেন । পৌরাণিক কাহিনী ও তার কলাকুশলীদের বিজ্ঞানের বিষয় করে তুলতে বিজেপির উদ্যোগ এবং ব্যাখ্যার ধারাবাহিকতায় মাননীয় ঠাকুর বলেছেন। তিনিই প্রথম এমন মন্তব্য করেছেন তা নয় । তাঁদের সর্বভারতীয় নেতা মোদিজিও এমনতর মন্তব্য করেছেন কয়েক বছর আগেই। প্লাস্টিক সার্জারি অতীতে এই দেশে হয়েছে বলেই গণেশের হাতির মাথার উদাহরণ দিয়েছিলেন তিনি । তদানীন্তন বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেছিলেন বেদের তত্ত্ব আইনস্টাইনের তত্ত্বের থেকে অনেক উন্নত যার প্রমাণ তাঁর কাছে আছে বলে দাবি করেছিলেন । বিপ্লব দেব ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ইন্টারনেট প্রসঙ্গে বলেছিলেন, মহাভারতের যুগে ইন্টারনেট ছিল । না হলে সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্রকে যুদ্ধের বর্ণনা দিতে পারতেন না বলে মন্তব্য করেছিলেন । তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী নিশঙ্ক নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কারের আগেই নাকি ভারতীয়রা তা আবিষ্কার করেছেন বলে বলেছিলেন । এমনকি তার প্রমাণ তাঁর কাছে আছে বলে মন্তব্য করেছেন । বিজ্ঞানের গবেষকদের কাছে তার প্রমাণ না থাকতে পারে, কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর কাছে থাকাটা যেন স্বাভাবিক । কারণ তিনি দেশের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন যে । শুধু নেতা, মন্ত্রী নন । অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উপাচার্য 106 তম বিজ্ঞান কংগ্রেসে বলেছিলেন, ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের অনেক আগেই পুরাণের দশাবতার তত্ত্ব অনেক বেশি সমৃদ্ধ । এ ছাড়াও তিনি বলেছেন, রাবণের পুষ্পক রথ সহ মোট পঁয়তাল্লিশটি বিমান ছিল । এমনকি নারায়ণের সুদর্শন চক্রের সংস্করণ হল আজকের ক্ষেপণাস্ত্র । আবার কেউ কেউ বলেছেন গোরু অক্সিজেন দেয় । এমনকি গোরুর দুধে সোনা পাওয়া যায় বলে মন্তব্য করেছেন কেউ।
এই সমস্ত মানুষদের মন্তব্য সাধারণ মানুষের মনে একটা ছায়া ফেলে যেখানে বিজ্ঞানের থেকে পূরাণের মাহাত্ম্য তাঁদের কাছে সত্যিই বড়ো হয়ে ওঠে । এমনকি ছোটদের মনে এর প্রভাব অনেক বেশি পড়ে ।
বিজেপির নেতামন্ত্রীসহ তাঁদের সমমনোস্ক শিক্ষাবিদদের ধারাবাহিকভাবে পৌরাণিক বিষয়কে বিজ্ঞানের বিষয় করে তোলার এই চেষ্টা-যে অপরিকল্পিত নয় তা পরিষ্কার । পড়ুয়াদের মন যাতে যুক্তিনির্ভর হয়ে না ওঠে এটাই তাঁদের লক্ষ্য। তাঁদের সেই লক্ষ্যের প্রতিফলন তাঁদের তৈরি নতুন শিক্ষানীতিতে। পড়ুয়াদের মনকে ধ্বংস করে দিতে পারলে, সামাজিক অনুভূতিটা অতি দ্রুত ধ্বংস হতে থাকবে । এই প্রক্রিয়ার সূচনা আজকের প্রশাসন করে দিতে পেরেছে । অনুরাগ ঠাকুরের মত নেতাদের মন্তব্য প্রক্রিয়াটাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে যা তাঁরা প্রথম থেকেই চাইছেন ।

