সোমনাথ চৌধুরী :
এরাজ্যের সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে রাজ্য সরকার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করার পর রাজনৈতিক বিতর্ক ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এবছর ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে পাবে রাজ্যের প্রতিটি দুর্গাপুজো কমিটি। আর তার পরেই বিরোধীদের তরফে একের পর এক তীব্র আপত্তি সামনে এসেছে, এমনকি ঘোষণা করা হয়েছে আইনি লড়াইয়ের কথাও ।
সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ ও বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এবারও হাইকোর্টে (Calcutta High Court) যাবেন তিনি কমিটি গুলোকে দেওয়া এই অনুদানের বিরোধিতায়। শুক্রবার আদালতে উঠে আসে একটি অনেক দিনের পুরনো জনস্বার্থ মামলা, যেখানে রাজ্য সরকারের এই অনুদান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন দুর্গাপুরের বাসিন্দা সৌরভ দত্ত। আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “আমি জানি, এই মামলার শুনানি চলতে চলতে পুজো এসে যাবে, ছুটি পড়ে যাবে আদালতের। কিন্তু তাও আওয়াজ তুলতেই হবে এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অনুদানের বিরুদ্ধে।” পাশাপাশি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বিজেপির তরফেও। কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) মামলার অনুমতিও দিয়েছে বলে সূত্রের খবর। পুরনো মামলাকেই নতুনভাবে সক্রিয় করে তোলা হবে এমনটাই অনুমান করা হচ্ছে।
বিগত কয়েক বছরে ধরে দূর্গাপূজায দেওয়া কমিটি গুলোর এই অনুদান নিয়ে একাধিকবার আদালতে মামলা হলেও এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারকে অনুদান দেওয়া বন্ধ করার কোনও নির্দেশ দেয়নি কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য নিজেও মনে করছেন, এবারও হয়তো একই পরিণতি হবে। তবু বিরোধীদের মতে, এই মামলার গুরুত্ব আছে রাজনৈতিক এবং নৈতিক ভাবে রাজ্য সরকারকে চাপ অনুভব করাতে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে এই দুর্গাপুজো অনুদান চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে রাজ্যে সর্বজনীন পুজো কমিটি রয়েছে প্রায় ৪৪ হাজারেরও বেশি। রাজ্য সরকারের দাবি, রাজ্যের অর্থনীতি চাঙ্গা হয় এই অনুদানের ফলে, কাজের সুযোগ তৈরি হয় বহু মানুষের এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়ে শহর ও গ্রামে।
অপরদিকে দিকে, বিজেপি ও সিপিএম সহ বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের রাজনীতি রয়েছে এর পিছনে। বিরোধীদের মতে, ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কোনও বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য সরকারিভাবে অর্থ দেওয়া সংবিধানবিরোধী।
দুর্গাপূজা শুরু হতে এখনও বেশ কিছুদিন বাকি থাকলেও, অনুদান নিয়ে রাজ্যে রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে। আইনি লড়াইয়ের পথে বিজেপি ও সিপিএমের জোট রাজ্য সরকারকে কতটা অস্বস্তিতে ফেলতে পারে সেটাই এখন দেখার।