ছন্দা আচার্য
একটি নতুন প্রাণের শুরু যখন শুধুই এককোষী অবস্থায় থাকে, তখন থেকে তাকে সযত্নে পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও পরিচালনার যে দায়িত্ব পালন করেন, তিনি হলেন একজন এমব্রায়োলজিস্ট। World Embryologist Day উদযাপন করা হয় সেই সব নিঃশব্দ কিন্তু অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানীদের সম্মান জানিয়ে, যাঁরা মানব প্রজনন চিকিৎসার আড়ালে থেকে অলৌকিক নতুন জীবনের সূচনা ঘটান।
বিশ্বজুড়ে সন্তানহীন দম্পতিদের মুখে হাসি ফোটাতে যে প্রযুক্তি আজ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে—IVF বা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন—তার নেপথ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তা হল এমব্রায়োলজিস্টের নিখুঁত কাজ। তারা গ্যামেট সংগ্রহ, নিষেক, ভ্রূণ উন্নয়ন, ফ্রিজিং এবং প্রতিস্থাপনের মতো সূক্ষ্ম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি ধাপে সমান দক্ষতায় নিয়োজিত থাকেন। তাদের হাতে তৈরি হয় সেই সম্ভাবনা, যা একদিন একটি দম্পতির কোলে সন্তান এনে দেয়।
এমব্রায়োলজিস্টরা সাধারণত থাকেন পর্দার আড়ালে। তারা সংবাদ শিরোনামে থাকেন না, কখনোই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসেন না। অথচ তাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি মাইক্রোস্কোপের তলায় দৃষ্টি—একটি নতুন জীবনের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে। শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক দক্ষতা নয়, এই পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে অসীম ধৈর্য, নিখুঁত মনোযোগ এবং মানবিক স্পর্শ। কারণ একটি কোষের যত্নে অবহেলা মানেই একটি জীবনের সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাওয়া।
আজ যখন বিশ্বজুড়ে বন্ধ্যাত্ব একটি সামাজিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে, তখন এমব্রায়োলজিস্টরা হয়ে উঠেছেন আশার আলো। তারা আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছেন। জেনেটিক স্ক্রিনিং থেকে শুরু করে স্টেম সেল গবেষণা—প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন ভবিষ্যতের জন্য। বহু চিকিৎসক-রোগীর কথোপকথনের মাঝে, নিষেকঘটিত পরীক্ষাগারে নিঃশব্দে কাজ করে যাওয়া এমব্রায়োলজিস্টের অবদান অনেক সময়েই অচেনা রয়ে যায়।
World Embryologist Day আমাদের সুযোগ দেয় এই অচেনা নায়কদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের। যারা জীবনের সূচনায় দাঁড়িয়ে বিজ্ঞান ও মানবিকতার সমন্বয়ে সৃষ্টি করেন নতুন জীবনের আলো। তাঁদের জন্যই বহু মুখে ফোটে এক নতুন হাসি, বহু হৃদয় খুঁজে পায় পরিপূর্ণতা।
আজকের দিনে, আমাদের উচিত এই পেশার প্রতি সম্মান দেখানো, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই চমৎকার জীববিজ্ঞানভিত্তিক ক্যারিয়ারের দিকে উৎসাহিত করা এবং বুঝে নেওয়া—একটি শিশুর আগমনের নেপথ্যেও থাকে এক নিঃশব্দ স্রষ্টার নিবেদিত প্রয়াস। তাই আজকের দিনে আমরা বলি—ধন্যবাদ, এমব্রায়োলজিস্ট! তোমাদের হাতে রচিত হয় জীবনের প্রথম অধ্যায়।