যোগমায়া আচার্য
ডিজিটাল দুনিয়া আমাদের জীবনকে যে পরিমাণে বদলে দিয়েছে, তা কল্পনারও বাইরে। এক সময় যেখানে দান-সহানুভূতির কাজ সীমাবদ্ধ ছিল মন্দির-মসজিদ, আশ্রম বা স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে, আজ তা পৌঁছে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে বিশ্বব্যাপী। আর এই নতুন ধারাকেই উদযাপন করতে প্রতি বছর ১৫ জুলাই পালিত হয় Social Media Giving Day—একটি দিন যা দানের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করে এবং মানুষকে উৎসাহ দেয় ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে, প্রযুক্তির ভাষায়।
সোশ্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর তাৎক্ষণিকতা এবং ব্যাপ্তি। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব বা হোয়াটসঅ্যাপ—যেকোনো মাধ্যমেই মুহূর্তে ছড়িয়ে দেওয়া যায় একটি আহ্বান, একটি অনুরোধ, একটি গল্প। সেই গল্প যদি হয় কোনো অসুস্থ শিশুর চিকিৎসার খরচ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন মানুষের সাহায্য, কিংবা পশু-পাখির আশ্রয়ের জন্য আবেদন—তাহলে তা হৃদয়ে নাড়া দেয় লাখো মানুষের।
Social Media Giving Day আমাদের শেখায়, প্রযুক্তি শুধু বিনোদন বা মত প্রকাশের মাধ্যম নয়, বরং তা হতে পারে মানবতার সবচেয়ে দ্রুতগামী বাহন। এই দিনটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে দান-সহযোগিতা করার জন্য—হোক তা অর্থ, খাবার, জামা-কাপড়, বই কিংবা কেবল একটি শেয়ার বা রিটুইট, যা পৌঁছে দিতে পারে কারও বিপদের কথা সঠিক স্থানে।
বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির সময় সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছিল সহায়তার প্রধান প্ল্যাটফর্ম। অক্সিজেন সিলিন্ডার, হাসপাতালের শয্যা, রক্তদান—সবই ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় মুহূর্তে, আর তাতে মানুষ পেয়েছে বাঁচার ভরসা। এই উদাহরণই প্রমাণ করে দেয়, সোশ্যাল মিডিয়া যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তবে তা হতে পারে সমাজ পরিবর্তনের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার।
এই দিনে ব্যক্তি, সংস্থা, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ও সমাজকর্মীরা নানা অনলাইন ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে। ক্রাউডফান্ডিং, লাইভ ফান্ডরেইজিং, চ্যারিটি চ্যালেঞ্জ, সচেতনতা পোস্ট—সবকিছুই দানের নতুন দিককে উন্মোচিত করে। এছাড়া তরুণ প্রজন্ম, যারা সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়, তারাও এই মাধ্যমে মানবিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাচ্ছে।
Social Media Giving Day-এর আসল বার্তাটি খুব সহজ—শেয়ার করো সাহায্য, ছড়িয়ে দাও সহানুভূতি। হয়তো একটা ছোট্ট ক্লিকই বদলে দিতে পারে কারও জীবন।
এই দিনে আমাদের শপথ হোক, আমরা সামাজিক মাধ্যমকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আনন্দ বা মতামতের প্রকাশস্থল হিসেবে না দেখে মানবতার এক নবতর স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করব। কারণ প্রযুক্তির আসল সৌন্দর্য তখনই, যখন তা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়াই হতে পারে সেই সেতু—যা আমাদের হৃদয়কে জুড়ে দেয় দূরের কারও ব্যথার সঙ্গে।