পিয়া রায়
International Self-Care Day কেবল একটি তারিখ নয়—এটি একটি শক্তিশালী বার্তা, একটি সচেতন প্রয়াস, যেখানে আমরা নিজেদের দিকে ফিরে তাকাই, নিজের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক চাহিদাকে সম্মান জানাই। প্রতিদিনের দৌড়ঝাঁপ, দায়িত্ব, সম্পর্ক এবং সামাজিক চাপে আমরা নিজের যত্ন নেওয়ার প্রাকৃতিক অভ্যাসটি প্রায় হারিয়ে ফেলি। ২৪ জুলাই এই দিনটি সেই হারানো অভ্যাসকে ফিরে পাওয়ার একটি সুযোগ।
আসলে 'সেলফ কেয়ার' মানে কেবল স্পা, শরীরচর্চা বা একটু বিশ্রাম নেওয়া নয়। এটি এক গভীর দায়বদ্ধতা, যেখানে নিজের অস্তিত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি এমন এক চর্চা যেখানে মানুষ বোঝে—তাকে সুস্থ ও স্থিতিশীল থাকতে হলে তাকে নিজেকেই যত্ন নিতে হবে। কারণ, আমরা যতই অন্যের ভালো চেয়ে থাকি না কেন, নিজের প্রতি দায়িত্ব ভুলে গেলে সেই ভালোবাসাও ক্রমে নিঃশেষ হয়ে যায়।
আজকের সমাজে মানুষ হয়ে উঠেছে অতিমাত্রায় কর্মনির্ভর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলতে থাকা এই যান্ত্রিক জীবন মানুষকে ক্লান্ত করে তোলে মানসিকভাবে। একসময় হতাশা, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা আমাদের ঘিরে ধরে। অথচ যদি আমরা প্রতিদিন সামান্য সময় নিজের জন্য রাখি—কিছুক্ষণ বই পড়া, প্রিয় সঙ্গীত শোনা, একটি হাঁটাহাঁটি, কয়েকটি গভীর শ্বাস কিংবা কেবল নিজের সঙ্গে একটু নিঃশব্দে সময় কাটানো—তবেই আমরা নিজেকে আবিষ্কার করতে পারি এক নতুন স্বাচ্ছন্দ্যে।
Self-care মানে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া নয়, বরং নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত করা যাতে জীবন ও দায়িত্বের ভারও যেন হালকা লাগে। এটি একটি আত্মজাগরণের পথ, যেখানে আমরা বুঝতে পারি—আমরা যদি নিজেকে ভালোবাসি, তাহলে তবেই অন্যকেও ভালোবাসার ক্ষমতা আমাদের থাকে।
এই দিনটি আমাদের শেখায়, নিজের অনুভব, ক্লান্তি ও ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দেওয়া দুর্বলতা নয়, বরং এটি আত্মশক্তির প্রকাশ। আমরা যদি নিজেদের কথা না বলি, নিজেদের যত্ন না নিই, তাহলে সময়ের সঙ্গে আমরা ভেঙে পড়ি, নিঃশেষ হই। অথচ আত্ম-যত্নই পারে আমাদের পুনরুজ্জীবিত করতে।
তাই আজ International Self-Care Day-এ একটি প্রতিজ্ঞা নেওয়া যাক—প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় নিজের জন্য রাখব। কারণ, নিজেকে ভালোবাসা মানে শুধু নিজেকেই ভালো রাখা নয়, বরং গোটা পৃথিবীকে ভালোবাসার শক্তি জোগানো। জীবনের ব্যস্ততার মাঝেই যদি আমরা নিজের ভেতরের শিশুটিকে একটু আদর করি, তবে দিনটাও হয়ত কিছুটা বেশি রঙিন হয়ে উঠবে। এবং সে-ই তো আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় উদ্যাপন।

