নরেন্দ্রনাথ কুলে
সম্প্রতি বাংলা ভাষা আক্রান্ত। বাঙালি আক্রান্ত । বাঙালির প্রতি হঠাৎই কি এই আক্রমণ ? না । পরাধীন ভারতবর্ষে এই আক্রমণের ইতিহাস রচনা হয়েছিল । কিন্তু সেই ইতিহাস আর ইতিহাসের পাতায় বন্দি হয়ে থাকছে না । নব নব রূপে তার প্রকাশ ঘটছে । এই ঘটনা কোন আকস্মিক ঘটনা হিসেবে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায় কি ? ব্রিটিশ শক্তির ভিত নড়ে গিয়েছিল বাঙালির সংগ্রামে, তাই বাংলা ও বাঙালি র ঐক্য ভাঙার খেলায় তাদের কৌশলের ইতিহাস আজ অজানা নয় । কিন্তু আজকে বাঙালি বিদ্বেষ যেভাবে প্রকাশিত হচ্ছে তা কেবলই পৃথক ঘটনা হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যায় না । এ বিদ্বেষে কি রাজনৈতিক কৌশল নেই? যে কোন বিদ্বেষ হয় রাজনৈতিক, নয় ধর্মীয় বা অন্য কোন স্বার্থীয় চক্রান্ত দ্বারা রচিত হয়ে থাকেই । তবে আজকের এই বাঙালি বিদ্বেষ সব চক্রান্তের এক মিশ্রণ ছাড়া আর কিছু নয় । বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের তত্ত্ব প্রমাণ করার খেলায় শুধু প্রশাসন খেলছে তা তো নয় । সেই খেলায় চলছে রাজনৈতিক ক্ষমতার অঙ্ক । যে অঙ্ক স্বাধীনতা পরবর্তী আসামে প্রকাশ পেয়েছে । যে ক্ষমতায় ভারতবর্ষ জুড়ে হিন্দি বলয়ের আধিপত্য প্রকাশের ঔদ্ধত্য প্রকাশিত হয় । আবার সেই ক্ষমতাই রাজনৈতিক স্বার্থে প্রাদেশিকতার হুল তৈরি করে । সেই হুল বাংলা ও বাঙালিকে আজ বিদ্ধ করছে প্রতিনিয়ত ।
সম্প্রতি বাংলা ভাষা আক্রান্ত। বাঙালি আক্রান্ত । বাঙালির প্রতি হঠাৎই কি এই আক্রমণ ? না । পরাধীন ভারতবর্ষে এই আক্রমণের ইতিহাস রচনা হয়েছিল । কিন্তু সেই ইতিহাস আর ইতিহাসের পাতায় বন্দি হয়ে থাকছে না । নব নব রূপে তার প্রকাশ ঘটছে । এই ঘটনা কোন আকস্মিক ঘটনা হিসেবে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায় কি ? ব্রিটিশ শক্তির ভিত নড়ে গিয়েছিল বাঙালির সংগ্রামে, তাই বাংলা ও বাঙালি র ঐক্য ভাঙার খেলায় তাদের কৌশলের ইতিহাস আজ অজানা নয় । কিন্তু আজকে বাঙালি বিদ্বেষ যেভাবে প্রকাশিত হচ্ছে তা কেবলই পৃথক ঘটনা হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যায় না । এ বিদ্বেষে কি রাজনৈতিক কৌশল নেই? যে কোন বিদ্বেষ হয় রাজনৈতিক, নয় ধর্মীয় বা অন্য কোন স্বার্থীয় চক্রান্ত দ্বারা রচিত হয়ে থাকেই । তবে আজকের এই বাঙালি বিদ্বেষ সব চক্রান্তের এক মিশ্রণ ছাড়া আর কিছু নয় । বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের তত্ত্ব প্রমাণ করার খেলায় শুধু প্রশাসন খেলছে তা তো নয় । সেই খেলায় চলছে রাজনৈতিক ক্ষমতার অঙ্ক । যে অঙ্ক স্বাধীনতা পরবর্তী আসামে প্রকাশ পেয়েছে । যে ক্ষমতায় ভারতবর্ষ জুড়ে হিন্দি বলয়ের আধিপত্য প্রকাশের ঔদ্ধত্য প্রকাশিত হয় । আবার সেই ক্ষমতাই রাজনৈতিক স্বার্থে প্রাদেশিকতার হুল তৈরি করে । সেই হুল বাংলা ও বাঙালিকে আজ বিদ্ধ করছে প্রতিনিয়ত ।
বাংলা ভাষা শুধু বাংলাদেশের এই তত্ত্ব এবং তথ্য আজকের হিন্দি বলয়ের একটি শ্রেণীর মধ্যে এমনভাবে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে যা তাদের এ প্রজন্মের তথাকথিত শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের মধ্যে এক উগ্রতা ও ঔদ্ধত্যের বীজ একপ্রকার বপন করতে সমর্থ হয়েছে । যার বহিঃপ্রকাশ কলকাতার মেট্রোরেলে সুবেশিত হিন্দিভাষী যাত্রীর বাঙালি ও বাংলা ভাষা বিদ্বেষের ঘটনা প্রমাণ করেছে । আসলে বিকৃত ইতিহাসের শিকার এই প্রজন্ম। এই ইতিহাস রাজনৈতিক স্বার্থেই রচিত হয়ে চলেছে । সেই রচনায় বাংলা ও বাঙালি সম্পর্কে নতুন করে রচনার আর এক কৌশল। বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি ও বাংলা ভাষার ওপর যে আক্রমণ যেভাবে চলছে তাতে অনুপ্রবেশ তত্ত্ব প্রমাণ নয়, এই হাওয়া তুলে বাংলায় বিজেপির রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের একটা পথ তৈরি করা ছাড়া আর কিছু নয় । কিন্তু সেই পথ তৈরি করতে গিয়ে বিজেপি বরং তৃণমূলের পথ তৈরি করে ফেলছে । তৃণমূলের ধর্মীয় আচরণে বাংলা ও বাঙালি বিভাজনে বিজেপির পথ যেমন বাংলার বুকে তৈরি হয়েছিল, সেই তৈরি পথে বিজেপি নতুন পথে (অনুপ্রবেশের তত্ত্ব) বাঙালি বিদ্বেষের আগুন ছড়িয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটের ফায়দা তুলতে চাইছে । কিন্তু বিজেপি যত বাঙালি বিদ্বেষ সৃষ্টি করবে, তৃণমূল তত বাঙালির ত্রাতা হিসেবে নিজেকে দেখানোর চেষ্টা করবে । হিন্দু, মুসলিম ধর্মীয় সুড়সুড়ির বদলে বাঙালিয়ানা সুড়সুড়িতে ভোটের খেলায় তৃণমূল বাজিমাত করার পথ অনায়াসে করতে সক্ষম হবে, সে যোগ্যতা তার আছে । বিজেপি বাংলার তৃণমূলের হাতে সেই অস্ত্র তুলে দিলে তৃণমূলের যোগ্যতা প্রমাণে অনেক সহজ হয়ে যাবে ।
বাঙালি বিদ্বেষে রাজনৈতিক লাভের হিসেবে বিজেপি, তৃণমূল সহ অন্য রাজনৈতিক দল যাই অঙ্ক করুক তাতে বাঙালি ও বাংলা র মর্যাদা ও লাভ কিছু হবে কি ? বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতির ক্রমাগত নিম্নমুখি মান কি ঊর্ধ্বমুখি হতে পারে ? বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি সে কথা বলছে কি ? বাঙালির অস্মিতা, বাঙালির সংস্কৃতি কেবল বাক্যবাণ দিয়ে প্রমাণ হয় না । রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, শরৎচন্দ্র, নেতাজি, নজরুল বাঙালির অস্মিতা ও সংস্কৃতির সেই বাক্যবাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আজ । সেই সীমাবদ্ধতায় পড়ুয়াদের পাঠ্যসূচীতে তাঁরা নেই। সেই সীমাবদ্ধতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা পড়ে বারেবারে । শুধু রাজনৈতিক বাক্যবাণে রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, শরৎচন্দ্র, নেতাজি, নজরুল উচ্চারিত হলে বাঙালির অস্মিতা ও সংস্কৃতির মান বজায় থাকে না তা আজকের ভোট রাজনীতির চর্চায় প্রমাণিত নয় কি ? সেই চর্চায় আজ বাংলা ভাষা ও বাঙালি আক্রান্ত কোন ব্যতিক্রম ঘটনা নয় ।