পিয়া রায়
প্রতি বছর ১৪ই জুন ওয়ার্ল্ড ব্লাড ডোনার ডে উদ্যাপন করা হয় — যে দিনটি উৎসর্গিত থাকে সেই সকল উদার ও মহাদানশীল আত্মার জন্য, যারা স্বেচ্ছায় রক্তদান করে অপরের প্রাণ বাঁচান। রক্তদান হলো ভালোবাসা প্রকাশের এক অনন্য উপায়, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, কিন্তু জীবনে গভীর স্পর্শ রেখে যায়।
রক্ত হলো শরীরের অপরিহার্য উপাদান — যা অক্সিজেন ও পুষ্টির পরিবহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুর্ঘটনা, অসুস্থতা বা অস্ত্রোপচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত রক্তের ঘাটতি সৃষ্টি হয়। ঠিক সেই মুহূর্তে অপরিচিত কারো দেওয়া এক ব্যাগ রক্ত কারো মৃত্যুসঙ্কটে আশার আলো জ্বলাতে পারে। ওয়ার্ল্ড ব্লাড ডোনার ডে সেই মহাদানকে স্মরণ ও উদ্যাপন করার দিন, যে দানে রয়েছে অমৃতের স্পর্শ।
বিশ্বের অনেক দেশে রক্তের ঘাটতি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সেই ঘাটতি কারো জীবন হানি পর্যন্ত ঘটাতে পারে। তাই সবাইকে উৎসাহিত করা হয়েছে স্বেচ্ছায় ও নিরাপদ পরিবেশে রক্ত দিতে। বিশেষ করে ১৮-৬৫ বছর বয়সের সুস্থ ও সক্ষম ব্যক্তিরাই পারবেন অপরজনের জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে।
রক্তদান সম্পূর্ণ নিরাপদ ও যন্ত্রনাহীন, যা মাত্র কিছু মিনিটে সম্পন্ন হয়। এর পর শরীর আবার নতুন করে রক্ত সৃষ্টি করে, তাই দাতার শরীরে ঘাটতি হয় না। অপর দিকে সেই অল্প পরিমাণ রক্ত অনেক ক্ষেত্রে কারো জন্য নতুন জীবন ও সম্ভাবনার জন্ম দিতে পারে।
ওয়ার্ল্ড ব্লাড ডোনার ডে উদ্যাপন করার পিছে রয়েছে অপরাজেয় মানবতা ও ভালোবাসার স্পন্দন। যে দান অপরিচিত কারো উপকারে আসে, তা প্রকাশ করে যে সবাই সবাইকে ঘরে রাখতে চাই, সবাই চাই অপরজন ভালো থাকতে পারে। এটা বিশ্বাস ও ঐক্য প্রকাশের দিন — যে মানবতা ও ভালোবাসাই পারে দুর্বলতা ও অসুস্থতা জয় করতে।
রক্তদান মানে কারো জীবনকে আলোকিত রাখা। যে মুহূর্তে কারো হৃৎস্পন্দন থেমে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে অপর কারো দানে আবার তা স্পন্দিত হতে শুরু করে। ওয়ার্ল্ড ব্লাড ডোনার ডে তাই সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায় যে জীবন অমূল্য, এবং সেই জীবন বাঁচতে অপরজনের ভালোবাসাই শেষ আশ্রয়।
আজ সবাই ওয়ার্ল্ড ব্লাড ডোনার ডে-তে অঙ্গীকার করি — নিয়মিত ও স্বেচ্ছায় রক্তদান করব, অপরজনকে উপহার দেব নতুন জীবন, আশা ও স্বপ্নে পরিপূর্ণ থাকার সুযোগ। ভালোবাসাই হোক মানবতার পথচলা, যে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে বিনাদানে, বিনিময়ে কিছু চাইলে না — ঠিক যেমন রক্তদান।