Select language to read news in your own language

Border fence and political wall—নিরাপত্তার প্রয়াস বারবার ব্যর্থ কেন?

2 minute read


আর বিপ্লব 

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া নির্মাণের কাজ এখন আর শুধু অবকাঠামোগত প্রকল্প নয়, এটি পরিণত হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের রাজনৈতিক সংঘাতের নতুন ক্ষেত্র হিসেবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন যে, “রাজ্য সরকার জমি না দিলে কেন্দ্র কীভাবে সীমান্তে বেড়া নির্মাণ করবে?”, তখন তা শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক সমস্যা নয়—বরং তা স্পষ্টতই এক রাজনৈতিক বার্তা।

সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ দীর্ঘদিনের কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ও উত্তর সীমান্ত বরাবর কয়েকশো কিলোমিটার এখনও বেড়াহীন, যেখানে অবাধে অনুপ্রবেশ, চোরাচালান এবং মানবপাচার হয় বলে কেন্দ্রের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির অভিযোগ। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সীমান্তবর্তী এলাকায় জমি অধিগ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছে।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই জমি দিতে বারবার দেরি করছে বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলেই অভিযোগ। অমিত শাহ বলেছেন, "সীমান্ত রক্ষায় কেন্দ্র সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে, কিন্তু রাজ্য জমি দিতে না চাইলে কীভাবে বেড়া নির্মাণ সম্ভব?" এই বক্তব্যে যেন স্পষ্ট বার্তা—রাজ্য সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূরণের পথে জাতীয় নিরাপত্তা যেন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজ্যের যুক্তি, সীমান্ত এলাকার বহু অংশেই কৃষিজমি, বসতি এবং জনজীবনের ওপর এই প্রকল্পের প্রভাব রয়েছে। বেড়া তৈরি হলে বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হতে পারে, তাদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হতে পারে। অতএব, জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া কেবল প্রশাসনিক নয়, এক মানবিক ও সামাজিক প্রশ্ন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলে এসেছেন, “আমরা সীমান্ত নিরাপত্তার পক্ষে, কিন্তু মানবিকতার বিনিময়ে নয়।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর মধ্যে রয়েছে রাজ্য সরকারের একটি সচেতন রাজনৈতিক অবস্থান, যেখানে কেন্দ্রের আধিপত্যবাদী ভূমিকার বিরুদ্ধাচরণও রয়েছে।

এখানেই প্রশ্ন উঠে আসে—এই প্রকল্প কি কেবল একটি নিরাপত্তা সংক্রান্ত পদক্ষেপ, নাকি এর অন্তরালে রয়েছে ভোট-রাজনীতির গভীর ছায়া? সীমান্তে বেড়া তৈরি হলে অনুপ্রবেশ হ্রাস পাবে, এবং সেই অনুযায়ী জনবিন্যাস ও ভোটার প্রোফাইলেও পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদা, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে এই প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ।

বিরোধীরা বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকার এখানে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নকে ব্যবহার করছে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে। অন্যদিকে বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস ইচ্ছাকৃতভাবে সীমান্তে অনুপ্রবেশের রাস্তা খোলা রাখতে চায়, যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ভোটব্যাঙ্ক রক্ষা করা সম্ভব।

এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনে সাধারণ মানুষ, বিশেষত সীমান্তবাসী, পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। তারা একদিকে অনুপ্রবেশ, অপরাধ এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করেন, অন্যদিকে জমি হারানোর আশঙ্কা, ক্ষতিপূরণের অনিশ্চয়তা, এবং প্রশাসনিক জটিলতায় জর্জরিত হন।

সীমান্তে বেড়া প্রয়োজন—এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু এই প্রয়োজনকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতা অপরিহার্য। কেবল কেন্দ্র রাজ্যকে দোষ দিয়ে বা রাজ্য কেন্দ্রকে পাল্টা আক্রমণ করে একে অপরের রাজনৈতিক অবস্থান জাহির করলে সমস্যার সমাধান হবে না। বরং প্রয়োজন, একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে জাতীয় নিরাপত্তা, মানবিকতা এবং প্রশাসনিক বাস্তবতার ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।

সীমান্তে বেড়া হোক, কিন্তু তার জন্য রাজনীতির বেড়া না হোক—এই প্রত্যাশা নিয়েই তাকিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গবাসী।

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon