মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে কলেজছাত্রী সুতপা চৌধুরী হত্যাকাণ্ডে এক ঐতিহাসিক রায় দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি দেবাংশু বসাকের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এক নজিরবিহীন রায়ে অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরীর ফাঁসির সাজা বাতিল করে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। তবে এই যাবজ্জীবন সাজায় উল্লেখযোগ্য শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে— সুশান্ত ৪০ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোনও দয়া বা সাজা কমানোর আবেদন করতে পারবেন না। অর্থাৎ, ২০৬২ সালের মে মাসের আগে তাঁর পক্ষে কোনও রকম ক্ষমার আবেদন করা সম্ভব নয়।
সঙ্গে আদালত আরও নির্দেশ দেয়, দণ্ডিত সুশান্তকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
২০২২ সালের ২ মে বহরমপুরে একটি মেস হাউসের সামনে প্রেমিকা সুতপা চৌধুরীকে প্রকাশ্যে ছুরি দিয়ে ৪২ বার কোপ মারেন অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরী। জানা যায়, তিনি আগেভাগেই একটি টয়গান অনলাইনে অর্ডার করে এনেছিলেন আশেপাশের মানুষজনকে ভয় দেখাতে। ঘটনার পর সুশান্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তকারীরা দাবি করেন, এই খুনে সুশান্তের মধ্যে প্রবল প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যায়।
২০২৩ সালের আগস্টে বহরমপুর আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছিল। তবে সেই সাজা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে আবেদন জানান সুশান্ত।
এই মামলার শুনানি হয় হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। সুতপার পরিবারের দাবি, প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই সুশান্ত মানসিক নির্যাতন চালাত সুতপার উপর। হাই কোর্টের এই রায় নিয়ে আইনজগতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিচার মহলে মত, ৪০ বছর আগে দয়া চাওয়ার অনুমতি না দেওয়া এই রায় বাংলার অপরাধ বিচার ব্যবস্থায় এক মাইলফলক।
সুতপার পরিবারের সদস্যরাও জানিয়েছেন, এই রায়ে তাঁরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন। যদিও তাঁরা প্রথম থেকেই ফাঁসির দাবিতে অনড় ছিলেন। তবুও দণ্ডপ্রাপ্তের এত কঠোর শর্তে যাবজ্জীবন সাজা তাঁদের কিছুটা শান্তি দিয়েছে বলে মত তাঁদের।