সোমনাথ চৌধুরী
সন্তোষপুরের রাস্তায় বেরিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে কেউ অনুমান করতে পারছেন এই এলাকায় কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গিয়েছে ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে। দোকানপাট বন্ধ, চারিদিকে সুনসান পরিবেশ, চোখে পড়ে শুধু নিরাপত্তা বাহিনী আর পুলিশের টহল। স্থানীয়রা বলছেন, এই এলাকার মানুষ এতটা উত্তেজনা বহুদিন পরে দেখল । গোটা এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে বুধবার সন্ধ্যাবেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটি। হিংসা,লুঠ সহ পুলিশের উপর হামলা, বাজারে ভাঙচুর সব মিলিয়ে পরিস্থিতি রীতিমতো রণক্ষেত্রের রূপ নেয়।
রবীন্দ্রনগর থানা এলাকার মানুষ জানান,এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই । বুধবার সেই উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে । আচমকাই দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয় সন্ধ্যার দিকে , দ্রুত তা রূপ নেয় মারামারিতে।পুলিশের হস্তক্ষেপ করতে হয় পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে ওঠে। কিন্তু তারা পৌঁছতেই ইটবৃষ্টি শুরু হয়। আক্রান্ত হন একাধিক পুলিশকর্মী, এক মহিলা পুলিশকর্মী আহত হন। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েন।
শুধু রাস্তায় আটকে থাকেনি ঘটনার ভয়াবহতা।সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ যখন ব্যস্ত , ঠিক সেই সময় কিছু দুষ্কৃতী আক্রা ফটক বাজারে ঢুকে পড়ে। লুঠ হয় বিভিন্ন সামগ্রী, দোকান ভাঙচুর চালানো হয় । এমনকী সিসিটিভি (CCTV) ক্যামেরাও গুঁড়িয়ে দেওয়া যাতে অপরাধের প্রমাণ মুছে ফেলা যায়। বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকান বন্ধ ।বাজারে যাঁরা প্রতিদিন আসেন, তাঁরাও আসেননি ভয়ে। চোখে মুখে আতঙ্ক স্পষ্ট দোকানদারদের।
ঘটনার জেরে, বুধবার রাতেই মোট ১৮ জনকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ(Kolkata Police) এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ(West Bengal Police) যৌথ অভিযান চালিয়ে। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪ জনকে এবং রাজ্য পুলিশের তরফে গ্রেফতার করা হয়েছে আরও ৪ জনকে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে সরকারি কর্মীর উপর হামলা, হিংসা ছড়ানো, এবং লুঠ করার অভিযোগে, গোটা ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকাজুড়ে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ। র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে রবীন্দ্রনগর থানা সংলগ্ন প্রতিটি পয়েন্টে। সাথে জারি করা হয়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬৩ ধারা, যার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কোনও ধরনের জমায়েত। দোকানপাট আপাতত বন্ধ, না বেরনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্থানীয়রা ঘর থেকে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নজরদারি ও টহল জারি থাকবে।