নরেন্দ্রনাথ কুলে
আজকে একটা কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। একসময় রাজনীতির একাংশ দুর্নীতি ও গুন্ডাবাজদের নেপথ্যে ব্যবহার করত । আর এখন ক্ষমতা রাজনীতি জুড়ে তার প্রকাশ্য রুচিহীন উন্মাদনা চেপে রাখার কোন প্রয়োজন আছে বলে আজকের রাজনীতি মনে করে না । তাই রাজনীতির জনপ্রিয় নেতাদের বলতে শোনা যায় যে তাদের সবাইকে নিয়ে চলতে হয় । তবে সবাইকে নিয়ে চলতে গিয়ে তারা যাদের দিয়ে এই উন্মাদনা চালাচ্ছে, হয় তাদের কথায় রাজনীতি চলছে কিংবা রাজনীতির কথায় তারা চলছে । অথবা উভয়েই সমান্তরাল ভাবে চলছে যাতে ক্ষমতার স্বাদ পরস্পরের কাছে হীন হয়ে না যায় । রাজনীতি আদর্শের পথে না চললে তার আলো কমবে আর অন্ধকার বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আজকের ক্ষমতা রাজনীতিতে সততার পথও বিপথগামী হয়ে পড়ছে । এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জীবনানন্দ দাশের কবিতার লাইন বলে দেয় তার উত্তর---
'অদ্ভূত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই--প্রীতি নেই--
করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া ।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব'লে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয় ।'
রাজনীতির এই পরিবেশে যতরকমের দুর্বৃত্তায়ন আছে তা বাড়বে বই কমবে না । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে রাজনৈতিকভাবে দুর্বৃত্তে ভরে ওঠে সেখানে মানুষ গড়ার পরিবেশ আর থাকে না । এই পরিস্থিতিতে আজ গণতন্ত্রের সকল স্তম্ভও নিজেদের নিরপেক্ষতার প্রমাণ রাখার চরম দৃষ্টান্ত দেখাতে ব্যাহত হচ্ছে ।
ভুয়ো, ভেজাল কিংবা জাল বিষয়ক চর্চা এখন এমন পর্যায়ে এসে হাজির হয়েছে যে বর্তমান ব্যবস্থায় কোন পরিস্থিতিই দুর্নীতি, হিংসা বন্ধ করা সম্ভব নয় । কেবল সাময়িক তার ছেদ ঘটতে পারে । আজকের সমাজ ব্যবস্থায় নৈতিক চরিত্র গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটাই গলদপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে একদিকে, আর একদিকে রাজনীতিতে নৈতিক চরিত্র ও আদর্শ হারিয়ে যাচ্ছে । এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতির জাল কেটে ফেলার চেষ্টা চললেও সেই জাল আবার বিস্তার করবে স্বাভাবিক ছন্দেই । আর সেই ছন্দ সক্রেটিসের কথাটা আরো প্রাসঙ্গিক করে তুলবে--'এমন একটা সময় আসবে যখন জ্ঞানীরা জ্ঞানী হবার কারণে অনুশোচনা করবে, আর মূর্খরা তাদের মূর্খতার জন্য গর্ববোধ করে বেড়াতে, আর দূর্নীতিবাজরা তাদের দুর্নীতির জন্য উল্লাস করবে ।' সময় কি এই দিকেই এগিয়ে চলেছে ?