ছন্দা আচার্য
আজ ৩০ মে — International Day of Potato বা আন্তর্জাতিক আলু দিবস। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের খাবারের তালিকায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্যপণ্য হল এই সাধারণ অথচ অসাধারণ আলু। কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির দিক থেকে আলুর গুরুত্ব আজ আর কোনোভাবেই অবহেলার নয়। তাই জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) আলুর প্রতি সম্মান জানাতে চালু করেছে এই বিশেষ দিনটি।
আলুর জন্মভূমি থেকে বিশ্বজয়
আলুর উৎপত্তি হয়েছিল প্রায় ৮ হাজার বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকার আন্দেস পাহাড়ে—বিশেষ করে বর্তমান পেরু ও বলিভিয়ায়। ইনকা সভ্যতার মানুষরা প্রথম এর চাষ করতেন। এরপর ঔপনিবেশিক যুগে ইউরোপের মাধ্যমে গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এই ফসল।
ভারতে আলু আসে মোগল আমলে এবং পরবর্তীতে ব্রিটিশরা এর ব্যাপক চাষ শুরু করে। আজ ভারতের প্রতিটি রাজ্যে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পাঞ্জাবে আলুর উৎপাদন লক্ষণীয়।
প্রতিদিনের পাতে আলু
সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রন্ধনপ্রেমী রসিকেরা আলুর গুণমুগ্ধ। ভাজা, সিদ্ধ, ঝাল, ঝুরি, চপ, পরোটা, দম বা বিরিয়ানি—আলু ছাড়া যেন এসব অপূর্ণ। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি সংস্কৃতিতেই আলুর এক নিজস্ব জায়গা আছে।
বাংলায় একটি মজার প্রবাদই আছে—“আলু পেলে চুলোয় দেয় ভাত!” মানে, আলু থাকলে আর কিছু না থাকলেও চলে!
খাদ্য নিরাপত্তায় আলু
বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ সর্বাধিক উৎপাদিত খাদ্যশস্য হল আলু (চাল, গম, ভুট্টার পরে)। এটি এমন একটি ফসল যা কম সময়ে, কম জায়গায় এবং কম খরচে বেশি ফলন দেয়। ফলে দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে এটি খাদ্য নিরাপত্তার এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
আলুতে রয়েছে আয়রন, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও বি৬। এর উচ্চ ফাইবার উপাদান হজমে সাহায্য করে এবং ত্বক ও শরীর সুস্থ রাখে।
পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই
আলু জল সংরক্ষণে সহায়ক, কেননা এটি অন্যান্য অনেক ফসলের তুলনায় কম পানিতে চাষ করা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে টেকসই কৃষি নীতিতে আলুর গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে।
উপসংহার:
আজ আন্তর্জাতিক আলু দিবসে আমরা শ্রদ্ধা জানাই এই নীরব খাদ্যনায়ককে—যে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্ববাসীর ক্ষুধা নিবারণ করে চলেছে।
আলু শুধু খাবার নয়, এটা আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের কৃষি, এবং আমাদের ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তার প্রতীক।
চলুন, এই দিবসে আমরা আরও সচেতন হই—আলু চাষ, সংরক্ষণ ও খাদ্যবিজ্ঞান নিয়ে।
আর হ্যাঁ, আজকের সন্ধ্যার মেনুতে কি আলুর দম হবে?