Select language to read news in your own language

শ্রদ্ধা শুধু মাল্যদানে 




নরেন্দ্রনাথ কুলে




রাসবিহারী বসুর আজ জন্মদিন । তাঁর জন্মদিন স্মরণে তথাকথিত কোন আনুষ্ঠানিক কিংবা ঘরোয়া আয়োজন নেই। সমাজমাধ্যমের দৌলতে তাঁকে স্মরণ করে তাঁর ছবি হয়তো কিঞ্চিত কোথাও দেখা যাচ্ছে । যদিও আজকের দিনে অতি অল্প স্বরে তাঁর ছবি কারোরই মনে রেখাপাত না । এমনকি আজকের যাঁরা দেশসেবক বলে জাহির করেন, তাঁরাও এই মানুষটিকে স্মরণ করার জন্য বিচলিত নন । রাসবিহারী বসু ভারতের এমন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী যিনি ভারতের বাইরে থেকে সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে ভারতের বুক থেকে ব্রিটিশকে তাড়াতে তৎপর হয়েছিলেন । এ ব্যাপারে তিনিই পথিকৃত। পরবর্তী সময়ে নেতাজীর হাতে সে দায়িত্ব অর্পিত হয় । 
স্বাধীনতা সংগ্রামে আপোষকামী নেতৃত্ব দেশে থেকে ব্রিটিশের সাথে যখন সমঝোতা করে স্বাধীনতা আনার প্রয়াসে মগ্ন, তখন আপোষহীন ধারায় বিপ্লবীরা সশস্ত্র পথে ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে সক্রিয় হয়েছে । রাসবিহারী বসু এই আপোষহীন ধারার বিপ্লবী । 
দিল্লীতে গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ-এর ওপর বোমা নিক্ষেপের নেতৃত্ব দানের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় । কিন্তু ব্রিটিশের চোখে ধুলো দিয়ে জাপানে পৌঁছে যান । ব্রিটিশ বিরোধী জাপান । ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর তৎপরতায় জাপান ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পাশে দাঁড়াতে সম্মত হয় । পরে আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করেন যাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করেন সুভাষচন্দ্র । মিলিটারী পোশাকে সুভাষচন্দ্রের দীক্ষা রাসবিহারী বসুর হাতেই। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী নেতাগণ দেশের মধ্যেই সুভাষচন্দ্রকে কোনভাবেই যখন সমর্থন করেনি তখন দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় তাঁকে সমর্থন করবে না এটাই স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেল । স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নেতাজীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন আদৌ ছিল না । স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আপোষহীন বিপ্লবীদের সেভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়নি । স্বাধীনতা উত্তর কালের শাসক চেয়েছে আপোষহীন সংগ্রামের ইতিহাস মুছে দিতে। সে কথা ঐতিহাসিক রমেশচন্দদ্র মজুমদারের লেখা থেকে জানা যায়। --'১৯৫২ সালে যখন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ' স্বাধীনতার ইতিহাস ' লেখার জন্য একটি সম্পাদক মন্ডলী নিযুক্ত করে আমাকে তার ডিরেক্টর পদে নিয়োগ করেন, তখনও আমি বিপ্লববাদের ইতিহাস লেখার জন্য জীবিত বিপ্লবী নায়কদের কাহিনী সংগ্রহ করার প্রস্তাব করি । কিন্তু কোন একটি বিশিষ্ট দলের নায়ক ছাড়া আর কারও কাহিনী সংগ্রহ করা হয় না । এর কারণস্বরূপ বলা হয়েছিল যে, বিভিন্ন লোকের কাহিনী সংগ্রহ করলে তাতে গোলোযোগ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে । আমি এর উত্তরে বলেছিলাম, এইরূপ বিভিন্ন কাহিনী একত্র করলেই তা থেকে বিপ্লবের প্রকৃত ইতিহাস সংগ্রহ করা সম্ভব হবে । কিন্তু এ যুক্তি গ্রাহ্য হয়নি ।' 
ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের লেখা থেকে স্পষ্ট যে স্বাধীনতা সংগ্রামে আপোষহীন ধারার বিপ্লবীদের ইতিহাস বিস্মৃত করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে । সেই চেষ্টার স্রোতে আজ রাসবিহারীর বসুর চর্চা বিলীন হবে এটাই স্বাভাবিক । যেটুকু বা বাঁচিয়ে রাখা তা শুধুই মাল্যদানে ।  

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon



Tags: