নরেন্দ্রনাথ কুলে
বিজেপি ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে বের হতে পারে না । বিশেষ করে মানুষের পরিচয় তাদের কাছে কেবল ধর্মীয় পরিচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের একটাই এজেন্ডা হিন্দুত্ব । যদিও সকল হিন্দুদের জন্য তাদের এই এজেন্ডা তা বলা যায় না । কারণ তাদের এই জমানায় দলিত মানুষদের ওপর নির্যাতন একটা যেন স্বাভাবিক ব্যাপার । পাড়া থেকে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র তাদের কর্মকান্ড বলে দিয়েছে সে কথা । তাদের নেতা মন্ত্রীর মন্তব্য থেকে দলীয় কর্মকান্ডে সবসময়ই তাদের উগ্র হিন্দুত্বের ছবি পরিষ্কার ফুটিয়ে তোলে । সম্প্রতি ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ আবহাওয়ায় তার ছায়া পড়েনি এমন কথা বলা যায় না ।
যুদ্ধে দেশের সেনার ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করতে ছাড়েননি এক বিজেপি নেতা। যদিও তাঁর মন্তব্য নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে । বিরোধী দল হইচই বাঁচিয়ে দিয়েছে । মধ্যপ্রদেশের শাসক বিজেপি দলের নেতা ও মন্ত্রী বিজয় শাহ মন্তব্য করেছেন কর্ণেল সোফিয়া ক্যুরেশীর প্রতি । কর্ণেল সোফিয়া ও উইং কমান্ডার ভুমিকা সিং-এর পরিচয় নতুন করে আর মানুষের কাছে পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সমাজ মাধ্যমে তাঁদের কৃতিত্বের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা আর গর্বিত হবার পোস্ট অকল্পনীয় । সেখানে সোফিয়ার ধর্ম তুলে এমন মন্তব্য করলেন যে মোদিজি কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলেছেন । সেনার কোন ধর্ম হয় না । ধর্ম যদি দেখতে হয় তাহলে বলতে হয় যে ধর্মের প্রতি তোমাদের ঘৃণা সেই ধর্মের মানুষ দেশের জন্য লড়াই করে । তাঁর সেই লড়াইয়ে দেশের মানুষ গর্বিত হয় । কারণ সকল ধর্মের মানুষের দেশ এক । এই 'এক' কথাটার অর্থ বদলে দেওয়ার খেলায় এমন মত্ত হয়ে থাকে, সেই মত্ততা থেকে মাননীয় মন্ত্রী বিজয় শাহ বের হতে পারেননি । এটাই তো তাঁর দলের শিক্ষা । যে শিক্ষা তিনি ধাতস্ত করেছেন, সেই শিক্ষার পরিচয় দেবেন না, তা তো হতে পারে না ।
জঙ্গির ধর্ম হয় না । তবু তাদের নামে যে ধর্মের চিহ্ন লেগে আছে তাদের হিংসাত্মক কার্যকলাপে সেই ধর্মের সকল মানুষ দোষী হতে পারে কি ? যদি তাই হয়, তাহলে আর একটি ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিতে হয় । মাঁলেগাও বিস্ফোরণ মামলার রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বিজেপির নেত্রী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর। তাহলে প্রজ্ঞার ধর্মের সকল মানুষ ঘৃনিত হবে কি ?
মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখার রাজনৈতিক প্রক্রিয়াটা বিলীন হতে চলেছে । মানুষ কেবল ভোটার হিসেবে বিবেচিত হয় । কারা ধর্মীয় পকেটে যাবে, কারা দলিত পকেটে যাবে, কারা গাজর পকেটে যাবে, এভাবে রাজনৈতিক বিচার ও বিশ্লেষণে মানুষের মানুষ পরিচয়টা আর মুখ্য থাকে না । এই বিশ্লেষণে বিজেপির পরিচয় নিয়ে কোন তর্ক থাকা উচিত নয় । তাই বিজয় শাহের মন্তব্য বিজেপি হিসেবে কোন বিকৃত মন্তব্য নয় ।