নরেন্দ্রনাথ কুলে
অবশেষে যুদ্ধবিরতি। বিরতি মানে সাময়িক বিশ্রাম। কিন্তু সামরিক বিশ্রাম নয়। সম্প্রতি ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি মানে সামরিক বিশ্রাম নয়। রাষ্ট্রনেতার হুঙ্কার প্রতিহুঙ্কার সেই কথাই বলছে। যুদ্ধ যে-কোন সময় হতেই পারে। যুদ্ধ সময় দেখে না। ঠিকই। কিন্তু সময় ঠিক করে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র মানে আমজনতা নয়। আমজনতা যুদ্ধ করে না। আমজনতা যুদ্ধ চায় না। যুদ্ধের ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত এঁরাই। তবু রাষ্ট্রকে যুদ্ধ করতে হয়। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যুদ্ধ করতে হয়। যুদ্ধ মানুষের স্বার্থে হতে পারে পরাধীন দেশের ক্ষেত্রে। এখন পরাধীন দেশের অস্তিত্ব সে অর্থে আছে কি? যা আছে স্বাধীন দেশের স্বাধীনতায় তৃতীয় জনের প্রচ্ছন্ন হস্তক্ষেপ। এ ব্যাপারে পটু ক্ষমতাতাবান রাষ্ট্র আমেরিকা। যুদ্ধ যারা করছে তাদের একপক্ষ একেবারে পরাধীন বলতে যা বোঝায় তা কি বলা যায়? দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে হয় জল-জমির জন্য, না হয় বাজার দখলের স্বার্থে। আবার তৃতীয় পক্ষের কলকাঠি না থাকলে যুদ্ধ জমে ওঠে না। ইজরায়েল প্যালেস্টাইনের চলমান যুদ্ধে তৃতীয় পক্ষ নিয়ে কোন সংশয় নেই। আবার ক্ষমতাবান রাষ্ট্র তার নিজের স্বার্থে যুদ্ধ করে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পরিচয়ে সে কথা পরিষ্কার। ভারত পাকিস্তানের সাম্প্রতিক যুদ্ধের পরিচয় কি? জঙ্গী দমনে যুদ্ধ। পহেলগাঁও-এ পর্যটকদের উপর ঘৃণ্য জঙ্গী হানা যুদ্ধের কারণ। জঙ্গিদের মদতদাতা পাকিস্তান। তাই তাদের সাথে যুদ্ধ। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করলে জঙ্গী নির্মূল হবে তার নিশ্চয়তা একেবারেই নেই। কাশ্মীর সন্ত্রাসমুক্ত হিসেবে রাষ্ট্রের দাবিকে পহেলগাঁও-এর ঘটনা জল ঢেলে দিল কেন? এই কেন'র উত্তর যুদ্ধ হতে পারে কি? তবে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ নিয়ে একশ্রেণীর উন্মাদনা চোখে পড়ার মত। যুদ্ধ নয় শান্তি চাই বলে যারা দাবি করছে তাদের দেশদ্রোহী বলে আওয়াজ তুলছে। পাকিস্তানের সাথে শান্তির বার্তায় এ দেশেরই এক সময়ের প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই কে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার 'নিশান-ই পাকিস্তান' সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তখন মাননীয় দেশাইকে কোন বিদ্রুপ মন্তব্য শুনতে হয়নি। এই সময়ে শান্তির দাবিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রুপ আর দেশদ্রোহের আবহাওয়া তৈরি করার প্রয়াস কেন?
আমাদের দেশ সুরক্ষিত। দেশের মানুষ সুরক্ষিত। অথচ জঙ্গীর অনুপ্রবেশ ঘটলে তার দায় কার? এ প্রশ্নটা দেশের নাগরিক করতে পারবে না? দেশের যে-কোন স্পর্শকাতর জায়গা নিরপত্তাবাহিনীর শিথিলতা থাকবে কেন? গোয়েন্দা বিভাগ ঘটনা ঘটার আগেই সব খবর পায় না কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে যুদ্ধ হতে পারে না। এ কথাটা দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার করে দেবে কে? এই প্রশ্ন ও উত্তর ঢেকে যায় যুদ্ধের আবহাওয়ায়। যাই হোক যুদ্ধ বিরতি মানুষকে শান্তি দেয়। কিন্তু বিরতির সময়কাল চিরস্থায়ী হলেই তা মানুষের জন্য মঙ্গল। তবু কিন্তু থেকেই যায়!