Select language to read news in your own language

World Chess Day: বুদ্ধির খেলায় বিশ্বজয়

পিয়া রায়

প্রতিবছর ২০ জুলাই বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব দাবা দিবস বা International Chess Day। এই দিনটি কেবলমাত্র দাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার দিন নয়, এটি মানব মস্তিষ্কের এক অনবদ্য উদ্ভাবনী খেলাকে উদযাপন করার এক মহোৎসবও বটে। ১৯২৪ সালের ২০ জুলাই ফ্রান্সের প্যারিসে প্রতিষ্ঠিত হয় FIDE বা Fédération Internationale des Échecs, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক দাবা সংস্থা। এর প্রতিষ্ঠার দিনটিকে স্মরণ করেই ১৯৬৬ সাল থেকে ইউনেস্কো ও ফিদে’র তত্ত্বাবধানে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ২০১৯ সালে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ২০ জুলাইকে বিশ্ব দাবা দিবস হিসেবে।
দাবা একটি প্রাচীন খেলা, যার সূচনা হয়েছিল প্রাচীন ভারতে, ‘চতুরঙ্গ’ নামে। এটি পরে পারস্য ও আরবের মাধ্যমে ইউরোপে পৌঁছায় এবং ধীরে ধীরে আজকের আধুনিক দাবায় রূপান্তরিত হয়। দাবা এমন একটি খেলা, যেখানে জয় আসে শুধুমাত্র যুক্তি, পরিকল্পনা ও কৌশলের মাধ্যমে। এটি শারীরিক বল নয়, বরং মানসিক দৃঢ়তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক।
বিশ্ব দাবা দিবসে বিভিন্ন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সংগঠন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দাবা প্রতিযোগিতা, কর্মশালা ও প্রদর্শনী খেলা আয়োজন করা হয়। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যুক্তিবোধ, ধৈর্য, এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা গড়ে তুলতে দাবা এক অসাধারণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। বিশ্বজুড়ে দাবার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে, বিশেষ করে ডিজিটাল দাবা অ্যাপ ও অনলাইন টুর্নামেন্টের মাধ্যমে এটি আজ একটি বৈশ্বিক সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে।
বিশ্বের কিংবদন্তি দাবাড়ুদের মধ্যে আছেন গ্যারি কাসপারভ, মাগনাস কার্লসেন, বিশ্বনাথন আনন্দ, হিকুরু নাকামুরা প্রমুখ। ভারতের মত দেশেও দাবা আজ স্কুল স্তর থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তর পর্যন্ত এক অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক খেলায় পরিণত হয়েছে। দাবা শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হওয়া উচিত—এমন মতও অনেক মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদের।
দাবার বিশেষ একটি দিক হলো, এটি একান্তভাবে সাম্যের খেলা। এখানে বয়স, লিঙ্গ, জাতি বা সামাজিক অবস্থান বড় নয়; বড় হল বুদ্ধি ও দক্ষতা। একটি ১২ বছরের শিশু অনায়াসে পরাজিত করতে পারে এক অভিজ্ঞ প্রাপ্তবয়স্ককে, যদি তার চিন্তার ধার এবং কৌশল পরিপক্ব হয়।
এই বিশ্ব দাবা দিবসে আমাদের উচিত এই ঐতিহ্যবাহী ও চিরন্তন খেলাটিকে আরও বিস্তৃতভাবে সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া। শিশুরা যদি শৈশব থেকেই দাবার মতো খেলার সঙ্গে যুক্ত হয়, তবে তা তাদের যুক্তিবোধ, মনঃসংযোগ, ধৈর্য ও মানসিক ভারসাম্য গঠনে বড় ভূমিকা রাখবে। পরিবার, বিদ্যালয় ও সামাজিক সংগঠনগুলিকে দাবার প্রসারে এগিয়ে আসা উচিত।
পরিশেষে বলা যায়, দাবা কেবল একটি খেলা নয়, এটি একটি জীবনদর্শন। বিশ্ব দাবা দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কৌশল, ধৈর্য ও মননের জয়গান গাওয়া এই খেলাটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও গঠনমূলক ও যুক্তিনির্ভর করে তুলতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আসুন, ২০ জুলাই শুধুই একটি তারিখ না রেখে, দাবাকে প্রতিদিনের জীবনের অংশ করে তুলি।
ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon