রাজীব সিকদার
বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের অনুমোদিত ব্যবসায়ী সুচতুর সম্প্রদায় বাঙালী খেতাব পেয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। যা বাঙ্গালী জাতিসত্ত্বার পরিপন্থী। বাঙ্গালী কোনো সনাতন ধর্মীয়, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক কিম্বা নৃতাত্ত্বিক সংকীর্ণ সম্প্রদায় নয়। পাহাড়, নদী, সমুদ্র ঘেরা প্রাকৃতিক ভূখণ্ডে হাজার হাজার বছর ধরে আগত মানুষের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক সত্ত্বা বৃহত্তর গোষ্ঠী বাঙ্গালী পরিচয়ে খ্যাত। কালক্রমে এই সত্ত্বা একটা জাতিতে পরিণত হয়েছে। এই সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর বুদ্ধিবৃত্তি, মূল্যবোধ, ধৈর্য্য , সহনশীলতা, প্রযুক্তি জ্ঞান এশিয়া তথা পৃথিবীর জুড়ে প্রসারিত। উৎপাদন ব্যবস্থার বিকাশ ও উৎপাদিত দ্রব্যের সঠিক বণ্টনের ক্ষেত্র বাঙালি তৈরি করেছে। কিন্তু, বাঙালি কোনোদিনই মানুষ ঠকানো ব্যবসায়ের শয়তানী প্রবৃত্তির সাথে মিশে যাওয়ার কূটকাচালিতে খাপ খায়নি। মানুষ ঠকানোর এই প্রবৃত্তি আসলে বাঙ্গালী জাতিসত্ত্বা বিরুদ্ধ। বাঙ্গালী প্রশংসা পেয়ে সমাজকে আরও অধিক দিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু প্রশংসার আড়ালে কোনো দিনই অধিক ধান্দাবাজে পরিণত হয়নি।
উন্নত মানব অনুভূতির বন্ধ্যা দুনিয়ায় বাঙালীই একমাত্র সকল মানুষকে সাথে নিয়ে অনির্দিষ্ট কাল চলবার ক্ষমতা রেখেছে । বাঙ্গালী আত্মরক্ষা জানে । কিন্তু প্রতি আক্রমণের কোনো নজির বাঙালীর নেই। তাই, বলা যায় বাঙ্গালী সত্ত্বা মানবতা রক্ষার উন্মততম তরবারি। যে তরবারি ধারণ করেছেন শরৎচন্দ্র, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, সুভাষ বোস, আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ বিশ্ববরেণ্য মানুষ। সমাজ বিজ্ঞান সেকথাই বলে।
তাই, ভারতবর্ষ জুড়ে কেন্দ্রের শাসক বিজেপির যে মৌলবাদী চিন্তা বাঙালী বিদ্বেষের বিষবৃক্ষ রোপণ করেছে সেখান থেকে বাঙালীকে তার সংস্কৃতি দিয়েই আত্মরক্ষা করতে হবে। মনে রাখবেন, সনাতন মৌলবাদী হিন্দুত্ববাদের রাজনীতির সম্পুর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে মুক্তমনা, সহনশীল, মানবতাবাদী বাঙালী জাতি সত্ত্বা। কিন্তু, এই উপলব্ধি কয়জনের আছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তাই, অবিলম্বে সনাতন হিন্দুত্ববাদী মৌলবাদ বনাম বৈচিত্রময় মুক্তমনা বাঙালী সত্ত্বার উপলব্ধি সৃষ্টির সময় আসন্ন। আত্মরক্ষার্থে এই উপলব্ধিই এখন আমাদের আপৎকালীন তরবারি। মৌলবাদী শাসকের বিরুদ্ধে এই তরবারি একসাথে ধারণ করতেই হবে।