Select language to read news in your own language

ভোট কি মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা !

পাঠক মিত্র


সম্প্রতি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী আগামী বিধানসভা(২০২৬) ভোটের ঢাক বাজিয়েছেন তাঁদের মিছিল ও সভায় । মানুষের চেতনায় ভোটের সেই ঢাক বাজতে হয়তো শুরু করেছে । মানুষের রাজনীতি সচেতনতার ওপর তাঁদের গদগদ বিশ্বাস নিয়ে তাঁরা জোর গলায় তাঁদেরকে দেখতে বলছেন ।
 মানুষ বোকা, সহজ-সরল না রাজনীতি সচেতন । এ কথা নিয়ে একটা কথা বলতে হয় । বোকা ও সহজ-সরল আর রাজনীতি সচেতন কথাগুলো কি কারণে সমপর্যায়ের এক তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্যের বিশিষ্ট দলে পড়ে গেল । এটা ঠিক যে কথাগুলো দিয়ে বাংলার মানুষের রাজনীতি বোঝার ক্ষেত্রে একটা বিশ্লেষণ করা যেতে পারে । স্বাধীনতার পর এই বাংলার মানুষ প্রায় প্রথম কুড়ি বছর কংগ্রেসের ওপর ভরসা রেখেছিলেন । তারপর পাঁচ বছর নানারকম টালবাহানার মধ্যে চলেছিল এই বাংলা । এই পাঁচ বছরে যুক্তফ্রন্টসহ আরো তিনবার জোট সরকার যেমন তৈরি হয়েছে, আবার তিন-তিন বার রাষ্ট্রপতি শাসনজারি হয়েছে । রাজনৈতিক এই টালবাহানায় যদিও সাধারণ মানুষের কোন হাত নেই, তবুও ভুগতে হয় মানুষকেই । সে যাই হোক। তারপর পাঁচ বছর আবার কংগ্রেসকে ভরসা করেছিল বাংলার মানুষ । মানুষের সেই ভরসা আন্দোলিত হল আরও এক রাজনৈতিক অস্থিরতায় । সেই অস্থিরতা থেকে বাংলার মানুষ বামফ্রন্ট কে বেছে নিয়েছিল । দীর্ঘ তিন দশক বাম রাজত্ব বাংলার সংস্কৃতির চেহারা উন্নত করতে পেরেছিল কি না তা নিয়ে রাজনৈতিক তর্ক দলীয়ভাবে জেতার চেষ্টা থাকতে পারে । কিন্তু বামপন্থীয় আদর্শের অভাব অস্বীকার করতে পারে না । তাই তৃণমূলের প্রশ্নাতীত জয়জয়কার । সেই জয়ের আধিপত্যের আক্রমণে কাটমানি, সিন্ডিকেট,সারদা আর নারদা,গরু পাচার, কয়লা পাচার, চাকরি দুর্নীতি থেকে বিরোধীশূণ্য রাজনীতি করার প্রক্রিয়ায় তৃণমূল আজ পাগলপ্রায় । তাই নেতার দেহরক্ষী সামান্য কনস্টেবলের পঞ্চাশ কোটির বেশি সম্পত্তি, আর ব্লক নেতাদের প্রাসাদোপম বাড়ি গাড়ি, নেতামন্ত্রীর কুকুরের জন্য ফ্লাট, এমনকি কুকুরের চিকিৎসা সরকারি মানুষের হাসপাতালে, হাসপাতাল থেকে দামি ওষুধ দুর্নীতি কোনকিছুতেই তৃণমূলের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন নয় । যদিও দেশজুড়ে কোনো সরকারই দুর্নীতি মুক্ত নয় । বিভাজনের রাজনীতি নতুন করে বেড়ে উঠছে । আজকে বাংলায়ও বাঙালি বিদ্বেষ থেকে ধর্মীয় বিভাজন রাজনীতির অ্যাজেন্ডা । এই অ্যাজেন্ডায় বিভাজিত মানুষের জীবন ভোটের মাধ্যমে উন্নত হতে পারে কি ? 
ভোট মানে কি ? এ প্রশ্ন মানুষের আছে কিনা সে প্রশ্ন মানুষই জানেন । তবে ভোট মানে পরিবর্তন এ কথাটা আদৌ বলা যায় না । পরিবর্তন মানে কার জয় বা পরাজয় নয় । তবে মানুষের জয় হয় না । তাই ভোট মানে হিংসা, ভোট মানে খুন, ভোট মানে সন্ত্রাস--কোথাও নিঃশব্দে আবার কোথাও প্রকাশ্যে । ভোট মানে এগুলোর পরিবর্তন নয় বলেই বাংলার মানুষ মেনে নিয়েছে বলা যায় । তাহলে ভোট মানুষের জীবন জীবিকার যন্ত্রণা কি লাঘব করে ? তাই কি ভোটের উত্তেজনা এতটাই ? যেন ভোট মানুষের সব সমস্যার সমাধান । এই ভোটের পর মানুষের যেটুকু সমস্যা আছে তা যেন জাদুর মতো ভ্যানিশ হয়ে যাবে । তা যদি হত, কেউ কি প্রশ্ন করেছে, বাজার কেন এত আগুন । বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক সাচ্ছল্য এতটাই কি যা এই আগুন বাজারদরে তাদের প্রভাব পড়ে না । নাকি যারা ভোটের উত্তেজনা তৈরি করে এবং যারা সেই উত্তেজনার শিকার হয় তাদের পরিবারে এমন বাজারের প্রয়োজন নেই ? এই পরিবারগুলো কেবল কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষীর ভান্ডার কিংবা একশো দিনের কাজ আর দু'টাকার চাল-গম পেলেই এদের কি আর কোন চাহিদা নেই ? এদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের মিড-ডে মিলের খাবার পেলেই পড়াশোনা সার্থক বলে মনে করে ? স্বাস্থ্যের কার্ড (স্বাস্থ্যসাথী বা আয়ুষ্মান ভারত) পেলেই যেন চিকিৎসা পাওয়ার সব সমাধান । 
যদি সব সমাধান হয়ে যায় তাহলে ভোটে সন্ত্রাস খুন কেন ? এর উত্তর 'জিতলেই টাকা..তাই এত কিছু' ( ১৪.০৭.২৩) প্রকাশিত সংবাদ বলে দিয়েছে। এই উত্তর এতদিন 'ওপেন সিক্রেট' ছিল । এখন আর 'সিক্রেট' নেই । বিনা পরিশ্রমে এই লভ্যাংশ্য কাদের পকেটে যায় তা আর উল্লেখ না করলেও চলে । এভাবে রাজনীতি জীবিকা হয়ে উঠলে ভোট মানে সন্ত্রাস হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । আর মানুষ রাজনীতি সচেতন বলে ভোটে হয় এ নয় ও জেতে ! 
ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon



Tags: