যোগমায়া আচার্য
৮ জুন বিশ্ব মহাসাগর দিবস। এই দিনটি শুধুই একটি তারিখ নয়, বরং এটি আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা সেই বিশাল জলরাশির প্রতি কৃতজ্ঞতা, সচেতনতা এবং দায়বদ্ধতার প্রকাশ। ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত ‘আর্থ সামিট’-এ প্রথম এই দিবস পালনের প্রস্তাব আসে, এবং পরে ২০০৮ সালে জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভ করে। এই দিবসটির মূল উদ্দেশ্য হলো মহাসাগরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, সামুদ্রিক দূষণ রোধ এবং টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা।
বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ অংশ জুড়ে রয়েছে এই নীল জলরাশি। এটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অক্সিজেনের অর্ধেকের বেশি উৎপন্ন হয় সমুদ্র থেকে, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে এর স্রোত এবং তাপমাত্রা, আবার লক্ষ কোটি মানুষ তাদের জীবিকা অর্জন করে এর উপর নির্ভর করে। অথচ এই মহাসাগর প্রতিনিয়ত মানবিক অবহেলার শিকার—প্লাস্টিক দূষণ, অতিরিক্ত মাছ ধরা, তেল নিঃসরণ, রাসায়নিক বর্জ্য ফেলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের পথে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর প্রায় ৮০ লাখ টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য মহাসাগরে গিয়ে পড়ে, যার ফলে হাজার হাজার সামুদ্রিক প্রাণী মারা যায়। প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস হচ্ছে, যা সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। আবার, অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, উপকূলীয় অঞ্চলগুলো ডুবে যাওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে।
এবারের বিশ্ব মহাসাগর দিবসের প্রতিপাদ্য "Awaken New Depths" অর্থাৎ "নতুন গভীরতা জাগিয়ে তুলি", আমাদের আহ্বান জানায় সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য ও গুরুত্বকে নতুন দৃষ্টিকোণে আবিষ্কার করতে এবং এটির ভবিষ্যৎ রক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণে এগিয়ে আসতে।
আজকের এই দিনে আমাদের উচিত নিজেদের জীবনযাত্রার ধরণে পরিবর্তন আনা—প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো, সামুদ্রিক খাবারে ভারসাম্য বজায় রাখা, উপকূলীয় অঞ্চল পরিষ্কার রাখা এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করা। স্কুল, কলেজ ও সমাজে সচেতনতা বাড়ানোও অত্যন্ত জরুরি।
মহাসাগর শুধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের উৎস। আমরা যদি আজ তাকে রক্ষা না করি, তবে আগামী প্রজন্মের জন্য এক নীলাশ্রয় শূন্য পৃথিবী রেখে যেতে বাধ্য হব। বিশ্ব মহাসাগর দিবসে আসুন, সংকল্প করি—এই নীলের নীরব আহ্বান আর উপেক্ষা নয়, তাকে রক্ষা করাই হবে আমাদের জীবনের অন্যতম ব্রত।