ছন্দা আচার্য
বিশ্ব ব্রেইন টিউমার দিবস প্রতি বছর ৮ জুন পালিত হয়, যার মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্রেইন টিউমার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিতকরণ এবং চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরা। ২০০০ সালে জার্মানির একটি সংগঠন ‘জার্মান ব্রেইন টিউমার অ্যাসোসিয়েশন’ প্রথম এই দিবসটির সূচনা করে। তখন থেকেই বিশ্বজুড়ে নানা ক্যাম্পেইন, আলোচনাসভা এবং গবেষণামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি গুরুত্বসহকারে পালন করা হয়।
ব্রেইন টিউমার হল একটি জটিল এবং প্রাণঘাতী রোগ যা মানুষের মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির মাধ্যমে গঠিত হয়। এটি দুই ধরনের হতে পারে— বিনাইন (সাধারণত ক্ষতিকারক নয়) এবং ম্যালিগন্যান্ট (ক্যানসারজাত)। এই টিউমার সরাসরি মস্তিষ্কের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায় এবং দ্রুত নির্ণয় না করা হলে তা জীবনঘাতীও হয়ে উঠতে পারে।
ব্রেইন টিউমারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অনেক সময় সাধারণ মাথাব্যথা, ঝাপসা দেখা, দৃষ্টিবিভ্রাট, স্মৃতিভ্রংশ, ভারসাম্যহীনতা, হাত-পায়ে দুর্বলতা, বমি বমি ভাব কিংবা আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ধরা দেয়। এসব লক্ষণ অনেক সময় অন্যান্য রোগের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় অনেকেই অবহেলা করেন। অথচ সঠিক সময়ে স্ক্যানিং ও পরামর্শ গ্রহণ করলে রোগ নির্ণয় সহজ হয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে জীবন রক্ষা সম্ভব হয়।
বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান ব্রেইন টিউমার নিরাময়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির মতো উন্নত প্রযুক্তি এবং ওষুধের ব্যবহারে চিকিৎসা অনেকটাই ফলদায়ক হয়েছে। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর মানসিক শক্তি এবং পরিবার ও সমাজের সহানুভূতিশীল সহযোগিতাও অত্যন্ত জরুরি।
এই দিবসটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শুধু চিকিৎসা নয়— সচেতনতা, সহানুভূতি ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই আমরা এই রোগের বিরুদ্ধে একত্রে লড়তে পারি। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এই দিনটি উপলক্ষে সচেতনতামূলক র্যালি, চিত্র প্রদর্শনী, ফ্রি চেকআপ ক্যাম্প ও অনলাইন সেমিনারের আয়োজন করে থাকেন।
বিশ্ব ব্রেইন টিউমার দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত— নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া, সন্দেহজনক লক্ষণ উপেক্ষা না করা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো। কারণ একটাই— সচেতনতা বাঁচাতে পারে একটি প্রাণ, একটি পরিবার, একটি স্বপ্ন।