Select language to read news in your own language

যন্ত্রণার দেয়ালে নীরব কণ্ঠ


পিয়া রায়

 

প্রতিটি মানুষের জন্ম হয় স্বাধীনতা, মর্যাদা ও মানবাধিকারের সঙ্গে। কিন্তু যখন কেউ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারে, দমনমূলক নীতির শিকার হয়ে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হন, তখন সেই মর্যাদা চূর্ণ হয়। ২৬ জুন পালিত হয় International Day in Support of Victims of Torture—এই দিনটি শুধুমাত্র একটি আন্তর্জাতিক দিবস নয়, এটি একটি প্রতিবাদ, একটি সমবেদনা, একটি আহ্বান—যাতে দুঃসহ নির্যাতনের শিকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় সম্মান ও সহানুভূতির সঙ্গে।

নির্যাতন একটি নিষিদ্ধ ও ঘৃণ্য কাজ—জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। তবুও পৃথিবীর নানা দেশে এখনও নির্যাতন চলে বিচারবহির্ভূতভাবে, জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য, মতাদর্শ দমন করতে কিংবা জাতি, ধর্ম বা লিঙ্গের কারণে। অনেক সময় এসব অত্যাচার হয় রাষ্ট্রের নামেই, গোপন বন্দিশালায়, যেখানে আইন, ন্যায়বিচার, মানবিকতা সব থেমে যায়।

এই দিনের তাৎপর্য আরও গভীর কারণ নির্যাতনের শিকার মানুষদের যন্ত্রণা একা ও নীরব। অনেকেই বিচার চায় না ভয়ের কারণে, কেউ হয়তো কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে চরম মানসিক ভাঙনের পর। কেউবা সমাজের চোখে হয়ে ওঠে “অস্থির”, “অপ্রিয়” বা “ঝামেলার কারণ”—যার ফলে তার লড়াই এক নিঃসঙ্গ অন্ধকারে রয়ে যায়। অথচ এই মানুষগুলোর অনেকেই ছিলেন মতপ্রকাশের সাহসী কণ্ঠ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক জীবন্ত প্রতিবাদ। নির্যাতনের ফলে তারা হারিয়েছেন দেহের স্বাভাবিকতা, মননের স্থিতি, কখনো স্বপ্ন, কখনো পরিবার।

২৬ জুন আসলে সেইসব নীরব যোদ্ধাদের জন্য এক সম্মান প্রদর্শনের দিন, যারা জেল, নির্যাতন কিংবা নিপীড়নের শিকার হয়েও মাথা নত করেননি। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একত্রিত হয়ে বলার দিন—“আমরা নির্যাতনের বিরুদ্ধে, আমরা মানবতার পক্ষে।” আজকের দিনে রাষ্ট্রকে, নাগরিক সমাজকে এবং প্রতিটি মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া জরুরি—নির্যাতন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কোনো রাজনৈতিক যুক্তির মোড়কে তাকে বৈধতা দেওয়া চলে না।

এই দিনে আমাদের দায়িত্ব শুধু স্মরণ নয়, প্রতিরোধও। প্রতিটি দেশ, প্রতিটি সমাজকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন তৈরি ও কার্যকর করতে হবে। ভুক্তভোগীদের জন্য চাই পুনর্বাসন, আইনি সহায়তা ও মানসিক চিকিৎসা। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—তাদের চাই সম্মান, যা তাদের যন্ত্রণার ওপর নয়, তাদের সাহসিকতার জন্য প্রাপ্য।

International Day in Support of Victims of Torture আমাদের শেখায়, মানবতা তখনই জয়ী হয়, যখন আমরা নিপীড়নের শিকারদের পাশে দাঁড়াই। নির্যাতনের দেয়াল যতই পাথুরে হোক না কেন, সহানুভূতির কণ্ঠ একদিন তা ভেঙে ফেলবেই। আসুন, আমরা সেই কণ্ঠ হয়ে উঠি।

 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon