Select language to read news in your own language

শর্মিষ্ঠা কি কংগ্রেসের টুলকিট? এক রাজনৈতিক কৌশল না কি আদর্শিক প্রতিবাদ?


আর বিপ্লব

 

বর্তমান সময়ে রাজনীতি শুধু আদর্শ বা নীতির খেলা নয়—এটা এক চতুর কৌশলের মঞ্চ, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ হিসাব করে রাখা হয়। শর্মিষ্ঠা নামটি সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কেউ বলছেন, তিনি কংগ্রেসের "টুলকিট"—অর্থাৎ পরিকল্পিতভাবে দলের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের হাতিয়ার। কেউ বলছেন, তাঁর গ্রেফতার ইচ্ছাকৃত, যাতে একটি রাজনৈতিক বার্তা পাঠানো যায়। তাহলে আসলে কী ঘটছে? এই ফিচারে আমরা বিশ্লেষণ করবো যুক্তি, তথ্য ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক হিসাবনিকাশের মাধ্যমে।

কে শর্মিষ্ঠা?

শর্মিষ্ঠা এক তরুণ, শিক্ষিত, স্পষ্টভাষী, এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় রাজনৈতিক সচেতন নাগরিক, যিনি সম্প্রতি কিছু বিতর্কিত পোস্টের জন্য গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি হিন্দু পরিচয়কে সামনে এনে একাধিক ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন। সেই পোস্টে রাষ্ট্রবিরোধী কিছু নেই বলেও অনেকের দাবি। তার গ্রেফতার নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—এটা কি আদর্শিক কণ্ঠরোধ, না কি অন্য কোনো বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ?

কংগ্রেসের "টুলকিট" অভিযোগের বাস্তবতা

"টুলকিট" শব্দটি বর্তমানে রাজনৈতিক শব্দভাণ্ডারে এমন এক পরিকল্পিত নথির প্রতীক, যা সমাজমাধ্যম ও রাজপথে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার। অতীতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপি এই ধরনের অভিযোগ এনেছে, যেখানে দলটি নাকি পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় ও সামাজিক বিভাজন ঘটিয়ে রাজনীতির মুনাফা তুলতে চায়।

এবার অনেকের ধারণা, শর্মিষ্ঠা সেই ধরনের "প্রোডাক্ট"—যিনি হিন্দু ভাবনার মুখপাত্র হয়ে বিজেপির কিছু নীতির সমালোচনা করবেন এবং পরে কংগ্রেস তার পেছনে দাঁড়িয়ে হিন্দু ভোটের বিভাজন ঘটাবে। অর্থাৎ, তিনি যেন এক "কনট্রোলড অপোজিশন"।

কিন্তু প্রশ্ন হলো: শর্মিষ্ঠার কর্মকাণ্ড কি এই রকম পূর্বপরিকল্পিত ছিল?

শর্মিষ্ঠার গ্রেফতারের পর কংগ্রেসের কয়েকজন নেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে 'স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য বলিদানদাত্রী' হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এতে সরাসরি কংগ্রেস তাকে সমর্থন না করলেও, একটি "সিমপ্যাথি ওয়েভ" তৈরি হয়েছে।

এমন কৌশল অতীতে বহুবার দেখা গেছে—জেল থেকে রাজনীতি শুরু করেছেন বহু নেতা, যাদের জনপ্রিয়তা দ্বিগুণ হয়েছে। তাহলে শর্মিষ্ঠার গ্রেফতার কি পরিকল্পিত "সাক্রিফাইস"? এটা কি হিন্দুদের একটি অংশকে বিজেপি থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টার সূচনা?

কংগ্রেসের "সেকুলার" চেহারায় ফাটল?

শর্মিষ্ঠার মতামত প্রায়শই হিন্দু সংস্কৃতি ও ইতিহাসকেন্দ্রিক, যা কংগ্রেসের ঐতিহ্যবাহী ‘সেকুলার’ অবস্থানের বিপরীত। যদি কংগ্রেস তাকে খোলাখুলি সমর্থন করে, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—দল কি হিন্দু ভোটে ফোকাস করতে গিয়ে নিজের নীতিতে পরিবর্তন আনছে?

এই পন্থায় কংগ্রেস হয়তো বিজেপির ‘হিন্দু একাধিকার’ দাবি দুর্বল করতে চায়। অর্থাৎ, হিন্দু মানেই বিজেপি নয়—এই বার্তা সমাজে ছড়িয়ে দিতে শর্মিষ্ঠার মতো কণ্ঠকে সামনে আনা হচ্ছে। কিন্তু এতে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

রাজনৈতিক বাস্তবতা ও ভোটের অঙ্ক

ভারতের রাজনীতিতে আজ ‘পোলারাইজেশন’ অন্যতম হাতিয়ার। হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণ করে বহু দলই ভোটের লাভ তুলেছে। বিজেপি তার হিন্দুত্ববাদী অবস্থান দৃঢ় করেছে, কংগ্রেস বিপরীতে ‘সংবিধানিক সেকুলারিজম’ বজায় রাখার দাবি করে এসেছে।

কিন্তু গত কয়েক নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেসের এই অবস্থান স্পষ্টভাবে হিন্দু ভোটারদের টানতে ব্যর্থ হয়েছে। এর জবাবে তারা হয়তো ‘সফট হিন্দুত্ব’ কৌশল নিচ্ছে, যেমন রাহুল গান্ধীর মন্দির পরিক্রমা বা গরু সংক্রান্ত বক্তব্য।

শর্মিষ্ঠা যদি এই কৌশলের অংশ হন, তাহলে তিনি সেই "নিরীহ ভিন্নমতাবলম্বী হিন্দু কণ্ঠ" যিনি সরকার বিরোধিতা করছেন, অথচ ধর্মকে গাল দিচ্ছেন না—এক নতুন ধরনের রাজনৈতিক মুখ।

বিকল্প বিশ্লেষণ: শর্মিষ্ঠা কি আদর্শবাদী?

অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে বললে, শর্মিষ্ঠা হতে পারেন সত্যিকারের আদর্শবাদী একজন তরুণ, যিনি কংগ্রেস বা বিজেপি—কোনো দলীয় কৌশলের অংশ নন। তাঁর বক্তব্য স্বতঃস্ফূর্ত, চিন্তাশীল, এবং স্বাধীনচেতা।

তাঁর গ্রেফতার হয়তো কেবল প্রশাসনিক মাত্রাতিরিক্ততা, যা এখন রাজনৈতিক রূপ নিচ্ছে। সব কিছুতেই কৌশল খোঁজা কখনো কখনো সত্যিকারের প্রতিবাদীদের অপমানও হতে পারে।

ফাইনালি, শর্মিষ্ঠা কি কংগ্রেসের টুলকিট?

প্রমাণ নেই। কিন্তু রাজনীতি যেখানে সংবেদনশীল, প্রতিটি চরিত্র সেখানে সম্ভাব্য "মোहरा" হিসেবেই ব্যবহৃত হতে পারে।
তিনি কি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেফতার হলেন?
সম্ভব, যদি এটি এক সুনির্দিষ্ট কৌশলের অংশ হয়। আবার এটিও সম্ভব, তিনি নিজের বিশ্বাস থেকেই প্রতিবাদ করেছেন এবং সেটাই প্রশাসনের চোখে ‘বিরক্তিকর’ হয়ে উঠেছে।

কংগ্রেস যদি তাঁকে ব্যবহার করে হিন্দু ভোটের বিভাজন ঘটাতে চায়, তাহলে সেটি নতুন রাজনৈতিক ধারা সূচিত করবে। কিন্তু সেই ধারা কতটা টিকবে, তা নির্ভর করবে দেশের সচেতন নাগরিকদের বিচারবুদ্ধি ও নৈতিক সাহসের উপর।

 

 

 

 

 

 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon