পিয়া রায়
প্রতি বছর ৪ জুন বিশ্বজুড়ে পালিত হয় International Day of Innocent Children Victims of Aggression—একটি দিন যা শিশুদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, যুদ্ধ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এই দিনটির মূল বার্তা একটাই—শিশুরা রাজনীতি বা ক্ষমতার খেলায় বলি না হোক , তারা যেন থেকে যায় কেবলই শিশু হয়ে, ভালোবাসা আর নিরাপত্তার ছায়ায়।
যুদ্ধক্ষেত্রে শৈশব
বিশ্বের বহু দেশে, বিশেষত সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে, শিশুরা হয় বোমার শব্দে ঘুম ভাঙা কিশোর, না-খেয়ে দিন পার করা মেয়ে অথবা বন্দুক হাতে তুলে নেওয়া বালক। তারা হারিয়ে ফেলে পরিবার, বন্ধুত্ব, শিক্ষা ও শৈশব—সব কিছু।
জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুসারে, প্রতি বছর লাখ লাখ শিশু নানা ধরণের সহিংসতার শিকার হয়—যুদ্ধ, যৌন নির্যাতন, পাচার, শিশু শ্রম, ও সশস্ত্র গোষ্ঠীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয় এরা।
এই দিনটির সূচনা কীভাবে?
১৯৮২ সালে লেবানন যুদ্ধ চলাকালে ইজরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে অসংখ্য ফিলিস্তিনি ও লেবানিজ শিশু নিহত হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদেই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এই দিনটি নির্ধারণ করে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের জন্য বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বাড়াতে।
ভারতেও শিশু নির্যাতনের বাস্তবতা
আমাদের দেশেও শিশু নির্যাতন, শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, পাচার—এ সবই ভয়ঙ্কর বাস্তবতা। পত্রিকার পাতায় প্রায়ই চোখে পড়ে স্কুলড্রেস পরা শিশুর লাশ, অথবা গৃহকর্মী হিসেবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার মেয়ের ছবি।
সমাজ হিসেবে, এই সমস্যাগুলোকে শুধু সহানুভূতির চোখে নয়, সচেতনতা, শিক্ষা ও আইনি প্রতিরোধ গড়ে তুলে প্রতিহত করতে হবে।
আমরা কী করতে পারি?
# শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে সচেতনতা তৈরি করুন
# পরিবারের মধ্যে সহনশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলুন
# শিশু নির্যাতনের ঘটনা দেখলে নীরব থাকবেন না—আইনগত পদক্ষেপ নিন
# সমাজে বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ান—শিক্ষা, খাদ্য, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখুন
# শিশুদের শেখান মানবাধিকার, আত্মসম্মান ও ভালবাসার গুরুত্ব
উপসংহার
একটি শিশু—সে যে দেশের, যে ধর্মের, যে শ্রেণির হোক না কেন—তার শৈশবটা হওয়া উচিত ভালোবাসা, শিক্ষা ও নিরাপত্তায় পূর্ণ।
আজকের দিনটি হোক একটি প্রতিজ্ঞার দিন—“আর কোনো শিশুর কান্না না, আর কোনো শৈশব যেন নিপীড়নের শিকার না হয়।”