পিয়া রায়
প্রতি বছর মে মাসের শেষ সোমবার পালন করা হয় ন্যাশনাল মেমোরিয়াল ডে, যা এক বিশেষ দিন — শহিদ সৈনিকদের স্মরণে একটি গৌরবময় ও হৃদয়বিদারক শ্রদ্ধা নিবেদনের মুহূর্ত। যদিও এই দিনটির উৎপত্তি যুক্তরাষ্ট্রে, আজ এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও মূল্যায়িত হয় — বিশেষ করে এমন সব দেশ যারা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বহু শহিদের রক্তে সিক্ত হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রেও এই দিবসটি এক গভীর আবেগ ও দায়বদ্ধতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ের সীমান্ত সুরক্ষা, কারগিল যুদ্ধ, পুলওয়ামা হামলা কিংবা সিয়াচেনের তুষার যুদ্ধ— ভারতীয় সেনার অসংখ্য সাহসী যোদ্ধা দেশের জন্য আত্মবলিদান দিয়েছেন। তাদের স্মরণে দিনটি একটি মানসিক ও নৈতিক দায় হিসেবে উঠে আসে — যেখানে স্মৃতির গভীরতায় আমরা আবিষ্কার করি আত্মত্যাগের প্রকৃত অর্থ।
ন্যাশনাল মেমোরিয়াল ডে কেবল শোকের দিন নয়, এটি গর্ব, কৃতজ্ঞতা ও দেশপ্রেমের প্রকাশও বটে। শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক উপায় হলো আমাদের নিজেদের মধ্যে দেশসেবার চেতনা জাগিয়ে তোলা। তাঁদের জীবনের প্রতিটি বিসর্জন যেন আমাদের নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
ভারতের রাজধানী দিল্লির ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল বা ‘অমর জ্যোতি’ সেই চিরন্তন প্রজ্বলিত শিখা যা প্রতিদিন হাজারো মানুষকে এই আত্মত্যাগের কথা মনে করিয়ে দেয়। শুধু সেনাবাহিনী নয়, পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী, এবং অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মীরাও যাঁরা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সুরক্ষায় জীবন দিয়েছেন, তাঁরাও এই স্মরণে অন্তর্ভুক্ত।
বর্তমানে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি সামাজিক সংগঠনগুলোও এই দিনটিকে স্মরণ করে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে— যেমনঃ মৌন মিছিল, শহিদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কবিতা পাঠ বা শহিদদের আত্মত্যাগ নিয়ে আলোচনাসভা।
এই দিনটি কেবল অতীতের স্মরণে নয়, ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতিরও দিন। আমরা যেন শপথ গ্রহণ করি— শহিদদের ত্যাগ যেন বৃথা না যায়, আমরা যেন ধর্ম-বর্ণ-রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এক একটি দায়িত্বশীল, সচেতন নাগরিক হিসেবে দেশের শান্তি ও অগ্রগতিতে অবদান রাখি।
শহিদদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান তাদের আদর্শ অনুসরণ করায়। মেমোরিয়াল ডে সেই আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলে — "তোমাদের বিসর্জনে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতাই হোক আমাদের প্রতিদিনের অহংকার ও রক্ষার অঙ্গীকার।"