Select language to read news in your own language

মানবাধিকারের পথপ্রদর্শক: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দিবসে এক নতুন অঙ্গীকার


যোগমায়া আচার্য 

 

প্রতিবছর ২৮ মে পালিত হয় Amnesty International Day—একটি বিশেষ দিন যা মানবাধিকার রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করা সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর ভূমিকাকে সম্মান জানায়। এই দিনটি শুধু একটি সংস্থার জন্মদিন নয়, বরং বিশ্বব্যাপী অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের, মানবমর্যাদার পক্ষে দাঁড়ানোর এবং ন্যায়বিচারের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার প্রতীক।

১৯৬১ সালে পিটার বেনেনসন নামক এক ব্রিটিশ আইনজীবীর উদ্যোগে এই সংগঠনের জন্ম হয়। এক পর্তুগিজ তরুণী শুধু স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করায় গ্রেপ্তার হওয়ায়, বেনেনসন একটি নিবন্ধ লেখেন—“The Forgotten Prisoners”, যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। সেখান থেকেই জন্ম নেয় Amnesty International। তখন থেকেই এই সংগঠন নির্যাতিত, ভুলভাবে বন্দি, নিপীড়িত, নির্যাতিত এবং অধিকারবঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে।

এই সংস্থা বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলে। যুদ্ধবন্দিদের প্রতি অমানবিক আচরণ, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবী, নারীর প্রতি সহিংসতা, সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র রক্ষা—সব ক্ষেত্রেই অ্যামনেস্টির সরব উপস্থিতি রয়েছে। তারা তথ্যভিত্তিক তদন্ত, রিপোর্ট প্রকাশ, আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইন এবং আইন প্রণেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মান বজায় রাখতে।

বিশ্ব জুড়ে প্রতিনিয়তই কোথাও না কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। কেউ কারারুদ্ধ, কেউ মতপ্রকাশে বাধাগ্রস্ত, কেউ রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার। Amnesty International Day আমাদের মনে করিয়ে দেয়—এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। এটি কেবল আইনজীবী, সাংবাদিক, বা সমাজকর্মীর কাজ নয়—আমরা সবাই এই সংগ্রামের অংশীদার।

ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষার বিষয়গুলো বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারতের ক্ষেত্রেও এমন অনেক ইস্যু তুলে ধরেছে, যেমন—কাশ্মীর ইস্যু, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA)-এর প্রতিবাদে ধরপাকড়, এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন। যদিও ২০২০ সালে অ্যামনেস্টির ভারত শাখার কার্যক্রম অর্থনৈতিক বাধার কারণে স্থগিত হয়ে যায়, তবুও তাদের রিপোর্ট ও কর্মকাণ্ড আজও আলোচনার বিষয়।

Amnesty International Day এক গভীর বার্তা বহন করে—একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক ও সহানুভূতিশীল বিশ্ব গঠনের জন্য আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কণ্ঠরুদ্ধদের কণ্ঠ দেওয়া, অধিকারহীনদের পাশে দাঁড়ানো, এবং ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম—এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। এই দিনে, আসুন আমরা নতুন করে ভাবি—আমাদের চারপাশে কেউ কি নীরবে নিপীড়িত হচ্ছে? আমরা কি তার পাশে দাঁড়াতে পারি?

"কারাগারের দেয়াল যতই পুরু হোক, সত্যের কণ্ঠকে চিরদিন থামিয়ে রাখা যায় না।" — এই বিশ্বাসেই এগিয়ে চলুক মানবাধিকার রক্ষার এই আন্দোলন।

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon