ছন্দা আচার্য
প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর ও রহস্যময় সৃষ্টি হলো ঝরনা — পাহাড়ের গা বেয়ে কলকল শব্দে নেমে আসা জলের ধারা। ঝরনা মানে জীবন, কলরব ও অপরাজেয় গতি। ঠিক এই অপরূপ উৎসগুলিকে উদ্যাপন করতেই ১৬ জুন আন্তর্জাতিক ঝরনা দিবস পালিত হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে — প্রকৃতির এই অমৃতধারা সম্পর্কে সচেতনতা ও ভালোবাসা প্রকাশ করার দিন হিসেবে।
ঝরনা শুধুই জল ঝরা নয়
— এটা পাহাড়, অরণ্য ও পরিবেশের সাথে মিশে একটা সুন্দর ও অনন্য দৃশ্য সৃষ্টি করে। কলকল
শব্দে ঝরা জল মানে প্রকৃতির গান — যা মানসিক চাপ হ্রাস করে ও আত্মাকে শান্তির
স্পর্শ দিতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ ঝরনা অ্যাঞ্জেল ফল্স (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,
ভেনেজুয়েলা), অপরদিকে সবচেয়ে চওড়া ঝরনা আবার
ইগুয়াজু (আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল)।
ভারতও ঝরনায় সমৃদ্ধ — যেমন ঝরনারাজ জগ্ ফল্স (কর্ণাটক), আথিরাপল্লিতে কলধারা (কেরালা), হাণ্ড্রু বা হুন্ড্রু
ফল্স (ঝাড়খন্ড) — যা অপরূপ ও আকর্ষণীয়।
ঝরনা পরিবেশে অপরিসীম
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি আশেপাশের উদ্ভিদের জন্য আর্দ্রতা ও পুষ্টির
উৎস হিসেবে কাজ করে, অনেক প্রাণীর আবাস সৃষ্টি করে ও জীবনচক্রকে সুস্থ ও সচল রাখে।
তা ছাড়া ঝরনা অর্থনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ — এর আশেপাশে গড়ে ওঠে
পরিবহণ, হোটেল ও খাবার ব্যবসা, যা
গ্রাম ও শহরগুলিতে কর্মসংস্থানে অবদান রাখে।
সময়ের সাথে সাথে দূষণ, অপরিষ্কার আবর্জনা ও
অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক ঝরনাই হুমকির মুখে রয়েছে। অপরিষ্কার পরিবেশ ও দূষিত জল হ্রাস করে যাচ্ছে
তাদের ঘরোয়া জীবজন্তু ও উদ্ভিদের আবাসস্থল।
সংরক্ষণ ও সচেতনতা সৃষ্টি অপরিহার্য — পরিবেশকে সুস্থ রাখা, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা ও পর্যটনকে উৎসাহিত করাই হতে পারে এর
সমাধান।
প্রকৃতির এই অমৃতধারা অমৃতসম— এর স্পর্শে আত্মা পেতে পারে শান্তির পরশ, দেহ পেতে পারে নতুন উদ্যম, ও পরিবেশ পেতে পারে নতুন জীবন।