পিয়া রায়
৭ জুন বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষা দিবস। প্রতিবছর এই দিনে সারা বিশ্বে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ে—নিরাপদ খাদ্য কেবল পেট ভরানোর উপায় নয়, এটি একটি মৌলিক মানবাধিকার এবং স্বাস্থ্যকর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) ২০১৯ সাল থেকে যৌথভাবে এই দিনটি পালন করছে, যাতে বৈশ্বিক খাদ্য চেইনের প্রতিটি ধাপে নিরাপত্তার বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়।
খাদ্য আমাদের জীবনের প্রতিদিনের সঙ্গী, কিন্তু আমরা কতটা জানি যে একটি খাবার স্বাস্থ্যকর না হলে তা কত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে? দূষিত বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্য থেকে জন্ম নিতে পারে অসংখ্য রোগ—জীবাণুবাহিত ইনফেকশন, খাদ্যে বিষক্রিয়া, দীর্ঘস্থায়ী পেটের অসুখ, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ খাদ্য-সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
খাদ্য সুরক্ষার জন্য দায়বদ্ধতা রয়েছে আমাদের প্রত্যেকের—কৃষক, পরিবেশক, বিক্রেতা, ভোক্তা, এবং সর্বোপরি সরকার। একজন কৃষক যদি কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ না করেন, এক গৃহিণী যদি রান্নার আগে সবজি ধোয়ার গুরুত্ব না বোঝেন, অথবা এক রেস্তোরাঁ যদি খাবার সংরক্ষণের স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলে—তবে বিপদ অনিবার্য।
নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্ব বোঝাতে হলে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে ঘর থেকেই। শিশুদের শেখাতে হবে হাত ধোয়ার গুরুত্ব, রান্নার সময় তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হবে, খাবার সংরক্ষণের নিয়ম মানতে হবে। খাদ্য শিল্পে কর্মরতদের জন্য আবশ্যিক করতে হবে হাইজিন প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি সরকারকেও কঠোর নজরদারি ও মান নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষা দিবসের মূল বার্তা—"Food safety is everyone’s business"—অর্থাৎ খাদ্য নিরাপত্তা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবার সম্মিলিত কর্তব্য। এই বার্তাটিই আজ আরও প্রাসঙ্গিক, কারণ একটি নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা তৈরি করতে হলে আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসই হতে পারে প্রকৃত রক্ষাকবচ।
খাদ্য যদি হয় জীবনধারণের রসদ, তবে তার সুরক্ষা হলো আমাদের অস্তিত্বের গ্যারান্টি। তাই আসুন, আজকের এই দিনে আমরা প্রতিজ্ঞা করি—নিরাপদ খাদ্য শুধু খাব, নয়, তা ছড়িয়ে দেব পরিবারে, সমাজে এবং গোটা জাতিতে। নিরাপদ খাদ্য মানেই নিরাপদ ভবিষ্যৎ।