সোমনাথ চৌধুরী
পুরির থেকে দীঘা, মাহেশ থেকে ইসকন আজ রথের দড়ি টানতে রাস্তায় নামবে লক্ষ লক্ষ পূর্ণার্থীদের ঢল।পুরির মন্দির থেকে মাসির বাড়ি অর্থাৎ গুন্ডিচা মন্দির যাবেন জগন্নাথ। ৭ দিন মাসির বাড়িতে থাকার পর উল্টা রথে চেপে জগন্নাথ, বলরাম সহ সুভদ্রা আবারও ফিরবেন পুরির মন্দিরে।
উল্লেখ্য, আহে নীল সৈল’। মনে পড়ে এই বিখ্যাত ভজনটির কথা? সপ্তদশ শতাব্দীর উড়িয়া কবি সালবেগ প্রভু জগন্নাথের জন্য ভজন রচনা করেছিলেন। তিনি জন্মগতভাবে মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও তাঁর ছিল অগাধ শ্রদ্ধা প্রভু জগন্নাথের উপর। এমনকী নিজের প্রাণ প্রভু জগন্নাথের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। শোনা যায় ,সালবেগের মৃত্যুর পর রথযাত্রার সময় গুন্ডিচা মন্দির যাওয়ার পথে রাস্তার পাশে তাঁর সামাধি অর্থাৎ কবরের সামনে এসেই থেমে গিয়েছিল জগন্নাথের রথের চাকা। ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন?
উল্লেখযোগ্য কবি (উড়িয়া ভাষার) নীলমণি মিশ্রের লেখা থেকে জানা যায়, মুঘল শাসনকালে মুঘল সালাতে কাজ করতেন সালবেগ। তাঁর পিতা ছিলেন মুসলিম ও তাঁর মা ছিলেন হিন্দু। তাদের পুত্র সালবেগ অবশ্য ইসলাম ধর্মই পালন করতেন। একবার সালবেগ এক যুদ্ধে অংশ নেন, যুদ্ধে তিনি গুরুতর আহত হন। আঘাত লেগে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয় তাঁর মাথায়। বৈদ্য দেখিয়ে কোনও ভাবেই ক্ষত নিরাময় হচ্ছিল না। এমন সময় মুঘল সালা থেকে সালবেগকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি এই ঘটনায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। ঠিক এমন সময় সালবেগের মা তাঁকে প্রভু জগন্নাথের স্মরণে যেতে বললেন, শুরু হল প্রভুর আরাধনা। দিনের পর দিন সালবেগের ভক্তি বাড়তে শুরু করল প্রভু জগন্নাথের প্রতি। একদিন হঠাৎ স্বয়ং জগন্নাথদেব স্বপ্নে এসে সালবেগের মাথার ক্ষত স্পর্শ করলেন। ঘুম ভেঙে সালবেগ অবাক হয়ে দেখলেন তাঁর মাথাতে আর কোনওই ক্ষত চিহ্ন নেই। সেই মুহূর্তেই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের দিকে রওনা দেন তিনি। কিন্তু তাঁকে মন্দিরে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয় বিধর্মী হওয়ায়।
প্রভু জগন্নাথের নাম জপ করতে থাকেন সালবেগ মন্দিরের বাইরে বসেই। কিছুদিন পর সেখানেই তিনি দেহ ত্যাগ করেন।
আর তাঁর মৃত্যুর পরই ঘটে সেই অলৌকিক ঘটনা। রথযাত্রার সময় জগন্নাথদেবের রথ গুন্ডিচা মন্দির যাওয়ার পথে রাস্তার পাশে সালবেগের সমাধির সামনে এসেই থেমে যায়। অনেক চেষ্টা করেও সেদিন রথের চাকা নড়ানো যায়নি। একভাবে রথ সেখানেই সাতদিন দাঁড়িয়ে থাকে। মন্দিরের পুরোহিতও যখন এ বিষয়ে কোনও বিধান দিতে পারলেন না, ঠিক তখন সমবেত ভক্তেরা সালবেগের নামে জয় জয়কার করতে থাকেন। পুনরায় রথ চলতে শুরু করে। আর বলাই বাহুল্য সেদিন থেকে আজও কিছুক্ষণের জন্য গুন্ডিচা মন্দির অর্থাৎ মাসির বাড়ি যাওয়ার সময় এই সমাধির সামনে জগন্নাথের রথ দাঁড় করানো হয়।