যোগমায়া আচার্য
জুন মাসের ২৭ তারিখ বিশ্বজুড়ে পালিত হয় International Pineapple Day—একটি ফলের সম্মানে নির্দিষ্ট একটি দিন শুনতে অবাক লাগলেও, আনারসের ইতিহাস, পুষ্টিগুণ ও জনপ্রিয়তা এতটাই বিস্তৃত যে তার জন্য আলাদা দিন থাকাই স্বাভাবিক। এটি শুধু একরাশ রসালোতা নয়, বরং ইতিহাসে রাজকীয় মর্যাদায় আসীন, খাদ্য তালিকায় সুস্বাস্থ্যের সঙ্গী, আর নানা রকম রান্নায় অপরিহার্য উপাদান।
আনারসের উৎপত্তি দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চলে, বিশেষ করে ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ের জঙ্গলে। স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ অভিযাত্রীদের মাধ্যমে ১৫শ শতকে এটি পৌঁছে যায় ইউরোপে। সে সময় আনারস ছিল বিলাসবহুল ফল—রাজপরিবার, ধনীদের ডাইনিং টেবিলে একে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে সাজিয়ে রাখা হতো। এমনকি ইংল্যান্ডে আনারস ভাড়া নেওয়ার চলও ছিল—শুধু অতিথিদের প্রভাবিত করার জন্য!
কিন্তু আজ আনারসের সেই রাজকীয়তা শুধু সাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর স্বাস্থ্য উপকারিতাই তাকে সত্যিকার অর্থে ফলের রাজা করে তুলেছে। আনারসে রয়েছে ব্রোমেলাইন নামক এক প্রাকৃতিক এনজাইম, যা হজম শক্তি বাড়ায় এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন C, ম্যাঙ্গানিজ ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বককে রাখে তরতাজা।
ভারতের মত উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে আনারস একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও মেঘালয়ে আনারসের চাষ ব্যাপকভাবে হয়। শুধু কাঁচা খাওয়ার জন্য নয়, এটি জ্যাম, জুস, কেক, চাটনি, সালাদ, এমনকি নিরামিষ রান্নাতেও ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি ক্যানিং ও প্রক্রিয়াজাত শিল্পে আনারসের চাহিদা বাড়ছে, যা কৃষকদের নতুন আয়ের সুযোগও এনে দিয়েছে।
আনারস শুধু রস বা স্বাদের জন্যই নয়, এর প্রতীকী মূল্যও রয়েছে। পশ্চিমা সংস্কৃতিতে এটি ‘অতিথি আপ্যায়ন’ ও ‘আতিথেয়তার’ প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেক রেস্তোরাঁ বা অতিথিশালায় আনারস-আকৃতির ঝাড়বাতি বা ভাস্কর্য থাকে, যা তার ঐতিহাসিক মর্যাদাকে তুলে ধরে।
এই দিনে তাই শুধু আনারস খেয়ে দিন উদযাপন নয়, বরং এর পুষ্টিগুণ, কৃষি-অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে সম্মান জানানোর দিন। আজকের দিনে আমরা যতবার এক টুকরো আনারসে কামড় বসাই, ততবার যেন মনে করি—এই ছোট ফলটির পেছনে লুকিয়ে আছে ইতিহাস, বিজ্ঞান, আর বিশ্বসংস্কৃতির মিশ্র স্বাদ।
International Pineapple Day হোক শুধু ফল উদযাপন নয়, বরং জীবনের মিষ্টতা ও স্বাস্থ্যসচেতনতার এক উৎসব। রসালো এক কামড়ে পাওয়া যাক সুস্বাদু স্বাদ আর সুস্থ জীবনের প্রতিশ্রুতি—এই হোক আনারস দিবসের আসল বার্তা।