পশ্চিমবঙ্গের ওবিসি তালিকা নিয়ে ফের বিতর্কে উত্তাল রাজনীতি। সম্প্রতি হাইকোর্ট রাজ্যের ৭৬টি জাতিকে ওবিসি তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিলে সরকার নতুন করে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। এই প্রেক্ষিতে জাতীয় পিছিয়ে পড়া শ্রেণি কমিশন (NCBC) রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে ঘিরে তিন দিনের মধ্যে জরিপ তথ্য ও সুপারিশপত্র চেয়ে পাঠিয়েছে।
২০২৩ সালে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় তালিকায় ৮৭টি নতুন জাতির অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দেয়, যার মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। হাইকোর্ট সে সময় ১১৩টি জাতির তালিকাভুক্তিকে বাতিল করে, কিন্তু রাজ্য তা উপেক্ষা করে ৭৬টি জাতিকে নতুন তালিকায় ফের অন্তর্ভুক্ত করে। এনসিবিসি বলছে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যে জরিপ ও তথ্য প্রয়োজন, তা তাদের কাছে কখনও জমা দেওয়া হয়নি।
কমিশনের চেয়ারম্যান হংসরাজ আহির জানিয়েছেন, জরিপ সংক্রান্ত ধারা ১৩(সি), ১৩(ডি) ও ১৯(এ) অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন—জাতিগুলির পেশাগত, শিক্ষাগত এবং আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি—উপস্থাপন না করেই অন্তর্ভুক্তি ঘটানো হয়েছে, যা সংরক্ষণ নীতির অপব্যবহার হতে পারে।
এনসিবিসি আরও দাবি করেছে, পূর্ববর্তী মাঠপর্যায়ের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে কিছু রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অভিবাসী অবৈধভাবে ওবিসি শংসাপত্র পেয়েছেন। কমিশনের মতে, এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রাজ্য সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও কমিশনের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলেই দাবি।
রাজ্য সরকারের দাবি, তারা যথাযথ জরিপ ও সমীক্ষার ভিত্তিতে তালিকা প্রস্তুত করেছে, কিন্তু কমিশনের প্রশ্ন—তাহলে সেই তথ্য কেন এতদিন চাপা ছিল? এনসিবিসি বলছে, হঠাৎ এতগুলি জাতিকে ফের তালিকাভুক্ত করা সন্দেহজনক।
এই বিতর্কে রাজনীতিও প্রবলভাবে জড়িত। বিজেপি বলছে, তৃণমূল কংগ্রেস মুসলিম তোষণের জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে ব্যবহার করছে। তৃণমূল অবশ্য বলছে, পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীকে ধর্ম নির্বিশেষে উন্নয়নের সুযোগ করে দিতেই তাদের পদক্ষেপ।
বর্তমানে রাজ্যের ওবিসি তালিকা আবারও আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে মামলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, এনসিবিসি কেন্দ্রীয় সরকারে সুপারিশ পাঠালে রাজ্যের তালিকা প্রশ্নের মুখে পড়বে।
সার্বিকভাবে, এই বিতর্ক সংরক্ষণ নীতির ন্যায়সঙ্গত প্রয়োগ, সাংবিধানিক রূপরেখা এবং রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাতকে সামনে নিয়ে এসেছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই রাজ্যের পদক্ষেপের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা।