Select language to read news in your own language

সবুজ রক্ষার প্রথম সেনা: ম্যানগ্রোভ অরণ্য


ছন্দা আচার্য

 

প্রকৃতির প্রতিরক্ষায় যখন আমরা কথা বলি, তখন পাহাড়, নদী বা সাগরের কথা আমাদের মনে আসে। কিন্তু এমন একটি প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ রয়েছে, যাকে আমরা অনেক সময় গুরুত্ব দিই না—সেটি হল ম্যানগ্রোভ বন। প্রতিবছর ২৬ জুলাই পালিত হয় “World Mangrove Day” বা “বিশ্ব ম্যানগ্রোভ দিবস”, এই শক্তিমান ও অতিপ্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিতে। এটি শুধুমাত্র পরিবেশগত নয়, বরং আর্থ-সামাজিকভাবেও এক অপরিহার্য শক্তি।

ম্যানগ্রোভ গাছ এমন এক প্রজাতির উদ্ভিদ যা খাঁড়ি, বদ্বীপ এবং উপকূলবর্তী লবণাক্ত এলাকায় জন্মায়। এর মূল বিশেষত্ব হল, এগুলি লবণ সহ্য করতে পারে এবং জলাভূমিতে স্থিতিশীলভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। এই গাছের জালের মতো মূল ব্যবস্থা কাদা ও বালুকে আঁকড়ে ধরে মাটিকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে থাকা লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ রাখে এই ম্যানগ্রোভ বন।

ভারতের সুন্দরবন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, যেখানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার থেকে শুরু করে নানা প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীর বাস। সুন্দরবনের এই জৈববৈচিত্র্য শুধু ভারতের নয়, গোটা বিশ্বের এক অমূল্য সম্পদ। শুধু সুন্দরবনই নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুতে ছড়িয়ে রয়েছে এই ধরনের উপকূলীয় বনভূমি।

মানবজাতির জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রেও ম্যানগ্রোভ বন অপরিহার্য। লক্ষ লক্ষ মানুষ মাছ ধরা, মধু সংগ্রহ, কাঠ বা ওষুধ সংগ্রহের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এছাড়া কার্বন শোষণ করার ক্ষমতায় এই বন গ্লোবাল ওয়ার্মিং রোধে বিশাল ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি হেক্টর ম্যানগ্রোভ বন এক বছরে প্রায় ১০০০ কেজি কার্বন শোষণ করতে পারে, যা অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনের তুলনায় অনেক বেশি।

তবুও আজ বিশ্বব্যাপী এই ম্যানগ্রোভ বন হুমকির মুখে। নগরায়ন, শিল্পায়ন, অবৈধ বন উচ্ছেদ ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রবণতা ধ্বংস করছে এই প্রাকৃতিক ঢালকে। গত কয়েক দশকে প্রায় ৩০ শতাংশ ম্যানগ্রোভ বন হারিয়ে গেছে। এটি শুধু পরিবেশগত বিপর্যয়ই নয়, মানবজীবনেও সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

বিশ্ব ম্যানগ্রোভ দিবস এই ক্ষতির বিপরীতে আমাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমাদের উন্নয়ন হোক ঠিকই, কিন্তু তা যেন প্রকৃতির সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে সহাবস্থানের পথ খুঁজে নেয়। স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ সংস্থা, বৈজ্ঞানিক গবেষক ও সাধারণ মানুষ—সবাইকে একত্রে এগিয়ে আসতে হবে এই বন সংরক্ষণের জন্য।

এই দিন আমাদের শিখিয়ে দেয়, প্রকৃতি আমাদের রক্ষা করে তখনই, যখন আমরা প্রকৃতিকে রক্ষা করি। ম্যানগ্রোভ শুধু গাছ নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যতের রক্ষাকবচ। তাই এই বিশ্ব ম্যানগ্রোভ দিবসে আসুন, আমরা প্রতিজ্ঞা করি—এই সবুজ সৈনিকদের রক্ষা করব, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে।

 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon