Select language to read news in your own language

মাথা অত্যাধিক ফাঁকা হয়েই বাড়ছে বিপদ

রাজীব সিকদার


মস্তিষ্কটা অনেকটা রেডিও সেন্টারের মতো। যখন যেমন চাইবেন চালানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। চোখ, কান, নাক, জিভ বা ত্বকের সব অনুভূতি বা পর্যবেক্ষনগুলো স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে মাথায় এসে মেশে। এই পর্যবেক্ষনগুলো কখনো সম্মিলিত কখনও বা একক ভাবে মস্তিষ্কে ঘাত প্রতিঘাত সৃষ্টি করে, নানান বিশ্লেষণ মূলক ক্রিয়া করে। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে মানুষে মানুষে কিম্বা বস্তুর সাথে মানুষের সংযোগ তত বাড়ছে এ যেমন সত্য আবার একই সাথে বহু ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা মস্তিষ্ককে মানবিক কিম্বা কায়িক শ্রমের কাজগুলো করতে না করছে। বা সেগুলো এড়িয়ে যেতে উস্কানি সৃষ্টি করছে।

এই ধরুন শিশুদের ক্ষেত্রে অডিও ভিজুয়াল সেনসেশন যেমন তীব্র হচ্ছে আবার অন্য দিকে সামাজিক মেলামেশা, হাসি - কান্নার টানাপোড়েন, পেটে খিদের জ্বালা, তেষ্টার অনুভূতি, গল্প বলা বা শোনার সুযোগ, মাঠের মধ্যে ইচ্ছেমতো খেলা, বাকবিতণ্ডা, মারপিট, পরিবারের সদস্যদের সাথে বাড়ির কাজে হাত লাগানো, পাড়ার উৎসব অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ, যেমন খুশি পড়া বা লেখার কাজ, সামাজিক অনুশাসন, প্রকৃতি জগতে ঘুরে বেড়ানো নানান প্রাণী কিম্বা পোষ্যদের সাথে থাকা ইত্যাদির সুযোগ ক্রমাগত কমছে । স্বাভাবিক ভাবে তার মধ্যে ভাবনার জগৎ, প্রশ্ন করার বা উত্তর শোনার মন - ধৈর্য্যের তেমন অধ্যবসায় দরকার পড়ছে না, আবার সেই অনুযায়ী আগ্রহ তেমন গড়ে উঠছে না।

 অভিভাবকদের মধ্যে বাচ্চাকে রেডিমেড খাবার ( ফাস্টফুড, স্ন্যাকস), রেডিমেড জামাকাপড় প্রদান, তথ্য আদানপ্রদান ভিত্তিক বা অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা ভিত্তিক পড়াশোনার পরিবেশে রাখা, সাজগোজের মাত্রাতিরিক্ত হুজুগ সৃষ্টি করা ইত্যাদির ঝোঁক প্রবল ভাবে বাড়ছে। স্বভাবতই, আপন নিয়মে শরীর ও মনের সমস্যার গভীরে ঢোকা, বাড়ির সদস্য, পাড়া - প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনের ভালো - মন্দ, অভাব - অনটন , জীবন যন্ত্রণার দেখা, বোঝা বা উপলব্ধির পরিবেশ নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি হওয়ার দরুন কমতে কমতে এখন শুধুমাত্র নিজের জন্যই নিজে বাঁচা এই অবস্থায় শৈশবের মননকে দাঁড় করানো হচ্ছে। একজন শিশুকে শুধুমাত্র তার নূন্যতম প্রয়োজনের বাইরে একান্ত ভালোলাগার যাবতীয় উপকরণ জোগাড়ের জন্য বাবা - মা অস্থির হয়ে পড়ছে। এমনকি এই বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিবারের মধ্যে কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছে। মা-বাবা'র এই অস্থিরতার কথা শিশু জানতে পেরে একটা ঝোঁকের মধ্যে পড়ে। স্বভাবতই নিজের চাহিদা নিয়ে তার মধ্যে মানসিক শান্তি - অশান্তির জগত জড়িয়ে যায়। যা হওয়ার কথা নয়। যা বয়স অনুযায়ী জানার নয় তা যেমন শিশু অতি অল্প বয়সেই জেনে যাচ্ছে, আবার যা তার জানার কথা সেটা সে জানতে পারছে না। এগুলো কোনোটাই শিশু মন বিকাশের স্বাভাবিক ধারণা নয়। 

এই ধরনের চিন্তার ক্ষেত্র সমাজ, প্রকৃতি ও অন্যান্য বস্তুজগতের থেকে শিশুকে বহু দূরে নিয়ে চলে যায় তাইই নয়, তাকে কৃত্রিমতার মধ্যে আনন্দ দিতে তৎপর হয়। এই পরিবেশে শিশুরা তাৎক্ষণিক আনন্দকে নির্ভর করে এগোতে গিয়ে শুধুমাত্র প্রবৃত্তি ও প্রযুক্তি কেন্দ্রিক মননের শিকার হয়। যে মুহুর্তেই স্নেহ, খিদে, আদর যত্ন কিম্বা পছন্দের প্রযুক্তি বিশেষত মোবাইল গেম, ভিডিও, রিলস ইত্যাদির অভাব ঘটে সেই মুহূর্তেই তার প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত অভিমানী, জেদি হয়ে পড়ে।

তাই, যে পরিবেশেই শিশু বাস করুক না কেনো এই আশু সমস্যার সমাধান হচ্ছে অভাব অনটন যায় থাক পরিস্থিতি অনুযায়ী শিশুকে ঘরের বা বাইরের নানান কাজে, খেলাধুলায়, শরীরচর্চায়, সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করানো, রিডিং পড়া, হাতের লেখা, রচনা লেখা, কবিতা মুখস্থ করা, নিজের কাজ নিজেকে করার জন্য উৎসাহিত করা, গাছ লাগানো বা পরিচর্চা করা, বিপদ এড়িয়ে অন্যান্য প্রাণীদের সাথেও ( গৃহপালিত পশু, পাখি) সময় কাটানো ইত্যাদি বিষয়গুলোতে শিশুর মনসংযোগ গড়ে তুলতে পারলে তার মস্তিস্ক কোনোভাবেই ফাঁকা তো থাকবেই না। এবং তার ভাবনাও বাস্তব ভিত্তি পেতে পারে এবং একজন ভরসা যোগ্য নাগরিক হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। পরিবারের দুশ্চিন্তাও এই পথে অনেক কমতে পরে। এই প্রক্রিয়ায় ফাঁকা মাথার বিকৃত আচরণ থেকে গোটা সমাজ মুক্তি পেতে পারে।

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon



Tags: