সোমনাথ চৌধুরী
স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও এবার থেকে পড়বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) লেখা বই রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি স্কুলগুলির লাইব্রেরিতে রাখতে হবে, এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা দফতরের তরফে এমনটাই খবর। স্কুলে স্কুলে পৌঁছে গিয়েছে বইয়ের তালিকাও, সেই তালিকায় 'মা' থেকে 'কথাঞ্জলী' সব বই রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
শিক্ষা দফতরের সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলির গ্রন্থাগার অর্থাৎ লাইব্রেরি গুলিতে মোট ৫১৫ টি বই রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) লেখা ১৯ টি বই রয়েছে। ১ লক্ষ টাকা করে স্কুলগুলিকে দেওয়া হয়েছে গ্রন্থাগারের জন্য,তারপরেই বইয়ের তালিকা পাঠানো হয়েছে। ধাপে ধাপে বিভিন্ন জেলায় স্কুলের গ্রন্থাগারগুলিতে মুখ্যমন্ত্রীর বই পাঠানো হবে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর।
উত্তরবঙ্গ দিয়ে শুরু করা হবে। প্রথম সেট পাঠানো হবে দার্জিলিং, কালিম্পং,কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, উত্তর দিনাজপুরে ও মালদা। দ্বিতীয় সেট যাবে বীরভূম, বাঁকুড়া,পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামে। তৃতীয় সেট পাঠানো হবে দক্ষিণ দিনাজপুর, হুগলী, নদিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। চতুর্থ সেটের বই পৌঁছাবে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায়, কলকাতা, ব্যারাকপুর, হাওড়া সহ মুর্শিদাবাদ এবংপশ্চিম বর্ধমান। পঞ্চম সেট পাঠানো হবে উত্তর চব্বিশ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান ও পূর্ব মেদিনীপুরে, এমনই খবর পাওয়া গিয়েছে বিকাশ ভবন সূত্রে।
প্রসঙ্গত, রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, লাইব্রেরির জন্য বই ক্রয়ের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকায় পাঁচটি ভিন্ন সেটের বই রয়েছে, যেগুলির মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ১৯টি বই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই বইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলও দুয়ারে সরকার, শিশু মন, কলম, আমাদের সংবিধান ও কিছু কথা, কলকাতার দুর্গা উৎসব, জাগরণের বাংলা, এবং আমি। এই বইগুলি মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা এবং রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বিবরণ তুলে ধরে।
সেই নির্দেশিকায় এও বলা হয়েছে, বইগুলি কোন কোন প্রকাশনা সংস্থা থেকে কিনতে হবে, তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এই প্রকাশকদের মধ্যে রয়েছে কিছু নামকরা সংস্থা, যারা মুখ্যমন্ত্রীর বই প্রকাশ করে। এই নিয়মের ফলে ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় থাকবে বলে সরকারের দাবি। তবে, কিছু শিক্ষক ও স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, নির্দিষ্ট প্রকাশকদের থেকে বই কেনার বাধ্যবাধকতা স্কুলের স্বাধীনতাকে কিছুটা সীমাবদ্ধ করছে।
অনুদানের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও বিস্তারিত নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি স্কুলকে ১ লক্ষ টাকার মধ্যে বই ক্রয় করতে হবে এবং অবশিষ্ট অর্থ লাইব্রেরির অন্যান্য প্রয়োজনে যেমন-শেলফ, আলমারি বা পড়ার টেবিল কেনার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এই অর্থের হিসাব রাখতে হবে এবং সেই হিসেব শিক্ষা দপ্তরে জমা দিতে হবে।
উক্ত বিষয়টি নিয়ে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান, তাঁরা এটাকে ক্ষমতার অপব্যবহার বলেই মনে করছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) লেখা বই সরকারি অর্থে পাঠানো হচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের গ্রন্থাগারে। ইতিপূর্বে এ রাজ্যের বা অন্য রাজ্যের কোনো মুখ্যমন্ত্রী পদে বহাল থাকার সময় এমন কাজ করেছিলেন কিনা এমনটা তাঁর মনে নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন,মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়াই যদি এমনটা করে থাকে শিক্ষা দফতর তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উচিত শিক্ষা দফতরকে নির্দেশ দেওয়া যাতে তাঁর লেখা বই স্কুলের গ্রন্থাগার গুলিতে না পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, সকলেই পরিচিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বইয়ের সঙ্গে। প্রশাসনিক প্রধান হওয়ার পাশাপাশি তিনি কবিতা, গানও লিখে থাকেন। এবার থেকে সেই বই পড়তে চলেছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও।
গ্রাফিক্স: এস চৌধুরী