নরেন্দ্রনাথ কুলে
যুদ্ধ অমানবিক হলেও যুদ্ধ হয়, যুদ্ধ বাধে, যুদ্ধ বানানো হয় । প্রতি যুদ্ধের পর সব পক্ষ এমনকি যুদ্ধ সম্পর্কে নিরপেক্ষ সহ সকলেই শান্তি চায় । শান্তির বার্তায় যুদ্ধের আবহাওয়া তৈরি হলেই সব পক্ষের সাধারণ মানুষের কপালে ভয়ের ভাঁজ তৈরি হয় । কিন্তু অতি ক্ষমতাবান যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রের কাছে সাধারণ মানুষের প্রাণ একেবারে মূল্যহীন । বর্তমান সময় বেশিরভাগ রাষ্ট্র যখন গণতন্ত্রের কথা বলে, শান্তির কথা বলে তখন তাঁদের সে কথার মূল্য শুধু কথার কথা হতে পারে । কারণ অতি ক্ষমতাবান রাষ্ট্রের যুদ্ধ নিয়ে একগুঁয়েমির কাছে শান্তিকামী রাষ্ট্রের শান্তি বার্তা কাজ করে না । ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক কূটনীতির এক খেলা থাকে । সেই খেলার পুরো সুবিধা নিয়ে চলছে এখন আমেরিকা, ইজরায়েল। ইজরায়েল প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ কোনভাবেই কেউই ইজরায়েল কে থামাতে পারছে না । যে যুদ্ধে এ পর্যন্ত পঞ্চান্ন হাজার মানুষের প্রাণ গেছে । তার মধ্যে প্রায় ষাট শতাংশ মহিলা ও শিশু । শুধু তাই নয় সাধারণ মানুষের আশ্রয়স্থল থেকে ত্রাণশিবির সহ গাজার স্কুল, হাসপাতাল একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে ইজরায়েল। আশি শতাংশ বাসস্থান ধ্বংস হয়েছে । আহত এক লাখ পনেরো হাজার মানুষ । প্রায় উনিশ লাখ মানুষ আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। যুদ্ধের ফলে অত্যন্তভাবে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে । ইজরায়েল সরকার কোনোভাবেই কোন ত্রাণ গাজায় যাতে পৌঁছতে না পারে তার ব্যবস্থা করেছে । গাজায় চিকিৎসা ব্যবস্থা পুরো ধ্বংস করে দিয়ে, খাদ্যের যোগানের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে খাদ্যসংকট তৈরি করে অসামরিক মানুষের বাঁচার অধিকার কেড়ে নেয় যে সরকার সে কতটা অমানবিক তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । ইজরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পৃথিবীর অবশিষ্ট দেশগুলির সরকার কিভাবে চুপ করে আছে । চুপ করে আছে এ কথা বলা যায় না। কেউ প্রত্যক্ষ আবার কেউ পরোক্ষে ইজরায়েল কে সমর্থন করে চলেছে । ভারতও ইজরায়েলের। পক্ষে । রাষ্ট্রপুঞ্জ নামক সংস্থাও ইজরায়েল সরকারের কাছে নগন্য হয়ে পড়ছে । রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ের প্রধান এক বার্তা দিয়েছেন যে ত্রাণের ট্রাক গাজায় ঢুকতে না দিলে আগামী আটচল্লিশ ঘন্টায় গাজায় আরো চোদ্দো হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে । ইজরায়েল সরকারের অমানবিক চেহারায় কোন রাষ্ট্রই চিন্তিত নয়, কারণ এই আধুনিক সভ্যতা ক্ষমতাবান রাষ্ট্র মানেই তারা যুদ্ধের পক্ষে, যুদ্ধে জেতার পক্ষে । তাই তাঁরা সাময়িক যুদ্ধবিরতির ডাক দিতে পারে, কিন্তু যুদ্ধ একেবারে নির্মূল করার পথ তৈরি করতে পারে না । এই মূহুর্তে যুদ্ধবিরতি শব্দটা ইজরায়েল আর আমেরিকা তাদের রাষ্ট্রের অভিধান থেকে মুছে ফেলে দিয়েছে । আমেরিকার যুদ্ধবাজের দাদাগিরি চিরকালই ছিল । এক দেশকে শান্তির কথা বলবে, আর এক দেশকে যুদ্ধ করার জন্য মদত দেবে কিংবা নিজেই বকলমে যুদ্ধ করবে । সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে তা যেন মাত্রাতিরক্তি বেড়ে গেছে । এখন ইরানকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইজরায়েলের সাথে নতুন করে খেলায় মেতেছে । তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিতেই তাদের যেন এই প্রচেষ্টা । আমেরিকার যুদ্ধাস্ত্র বিক্রয় করতে না-পারলে তার অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়ে । তাই যেন তেন উপায়ে দেশে দেশে যুদ্ধ বাননো চাই । অথচ সে শান্তির কথা বলে ।
রাষ্ট্র অমানবিক হলে পৃথিবীর সকল অসামরিক মানুষকে এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা ছাড়া আর কোন পথ নেই । তবে গর্জে উঠছে মানুষ আমেরিকা ও ইজরায়েলে । দিকে দিকে মানুষ যুদ্ধের বিরুদ্ধে পথে নামছে যা রাষ্ট্র তার প্রচারযন্ত্রে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করবে কিন্তু মানুষ জোট বাঁধছে । কারণ যুদ্ধ কতিপয়ের কাছে ভালো হলেও বেশিরভাগের কাছে অত্যন্ত কালো । রাষ্ট্র যুদ্ধ জয় করলেও মানুষের জয় হয় না । যুদ্ধপীড়িত রাষ্ট্রের মানুষের কাছে বেঁচে থাকাটাই যেখানে বিপন্ন সেখানে রাষ্ট্রের যুদ্ধে জেতা বা হারায় কি যায় আসে !