Select language to read news in your own language

গর্বের গাঁথা তেলেঙ্গানা: আত্মপরিচয়ের লড়াই থেকে রাজ্য গঠনের জয়

যোগমায়া আচার্য

 

১ জুন, তেলেঙ্গানা গঠন দিবস। ভারতের ইতিহাসে এই দিনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—যেখানে দীর্ঘ সংগ্রামের শেষে জন্ম নিয়েছিল দেশের ২৯তম রাজ্য তেলেঙ্গানা। ২০১৪ সালের এই দিনে, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আলাদা হয়ে একটি আলাদা প্রশাসনিক স্বত্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তেলেঙ্গানা। তবে এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের আবেগময়, কষ্টকর ও গণআন্দোলনের ইতিহাস।

ইতিহাসের পাতায় তেলেঙ্গানার সংগ্রাম

তেলেঙ্গানার জনমানসে বহুদিন ধরেই জমে উঠছিল বিচ্ছিন্নতার দাবি। যদিও ১৯৫৬ সালে ভাষার ভিত্তিতে অন্ধ্র প্রদেশের সঙ্গে তেলেঙ্গানাকে যুক্ত করা হয়, অনেকেই মনে করতেন এই সংযুক্তি তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক স্বার্থের উপর আঘাত হেনেছে। কৃষক, ছাত্র ও সাধারণ মানুষ নিজেদের অধিকার আদায়ে প্রতিবাদে সামিল হন। এই দীর্ঘ আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিলেন কে. চন্দ্রশেখর রাও (KCR), যিনি ২০০১ সালে গঠন করেন তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (TRS)। তার নেতৃত্বে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে গোটা অঞ্চলে।

২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্র সরকার তেলেঙ্গানার পৃথক রাজ্য গঠনের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে। এরপর ২০১৩ সালে ভারতের সংসদে অন্ধ্র প্রদেশ পুনর্গঠন বিল পাশ হয় এবং ২০১৪ সালের ২ জুন তেলেঙ্গানা একটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। হায়দরাবাদ হয় রাজধানী।

তেলেঙ্গানার অর্জন ও সম্ভাবনা

স্বাধীন রাজ্য হওয়ার পর থেকে তেলেঙ্গানা অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। কৃষি ও সেচ ব্যবস্থায় সরকার বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। "মিশন ভাগীরথ" প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে সুপেয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করা হচ্ছে। আইটি শিল্পে হায়দরাবাদ শহর আন্তর্জাতিক পরিচিতি পেয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ তেলেঙ্গানা

তেলেঙ্গানা শুধুই একটি রাজ্য নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক পরিচয়ের নাম। এখানকার ভাষা, সংগীত, পোশাক ও উৎসব অন্যান্য দক্ষিণী রাজ্য থেকে অনেকটাই আলাদা। বাথুকাম্মা উৎসব, বোনালু পরব এবং পারম্পরিক লাম্বাদি নৃত্য—সবই তুলে ধরে তেলেঙ্গানার বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি।

উপসংহার

তেলেঙ্গানা গঠন দিবস শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক অর্জনের স্মৃতি নয়, এটি আত্মপরিচয়, আত্মমর্যাদা ও গণতন্ত্রের এক মহৎ জয়গাথা। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আন্দোলন, ঐক্য ও নেতৃত্বের মাধ্যমে কীভাবে জনগণের স্বপ্ন বাস্তব হয়ে ওঠে। তেলেঙ্গানার এই জয় আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon