Select language to read news in your own language

বন্দুকের নলে সমাধান হয় না- যে বার্তা দেবে তার সমাধানে বন্দুকের নল

নরেন্দ্রনাথ কুলে 

মাওবাদী সেনার সর্বাধিনায়ক সহ সাতাশ জনকে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় সেনা খতম করেছে ছত্তীশগড়ে । মাওবাদী হত্যার এই সফল ঘটনায় প্রশাসন তথা রাষ্ট্রের গৃহ-মন্ত্রী অত্যন্ত আশাবাদী যে আগামী ছাব্বিশ সালের মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী নির্মূল হবে । সত্যিই এতদিনের মাওবাদীরা হামলা চালিয়েছে প্রশাসনের উপর । এবার তার মোক্ষম জবাব দিয়ে প্রশাসন দেখিয়ে দিল যে আর না অনেক হয়েছে ।
2021 সালে এই ছত্তিশগড়েই মাওবাদী হামলা হয়েছিল । খবর অনুযায়ী বাইশ জন সেনার মৃত্যু হয়েছিল । এমন দুঃখজনক বিশাল ঘটনা এর আগে আরো একবার ঘটেছিল । পনেরো বছর আগে এই ছত্তিশগড়েই আর এক মাওবাদী হামলায় ছিয়াত্তর জনের প্রাণ গিয়েছিল । মাওবাদী সমস্যা সন্ত্রাসবাদ সমস্যারই নামান্তর । সন্ত্রাসবাদ সমস্যায় জঙ্গি হানা নিয়ে জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক ইস্যু তৈরি হয়ে যায় । কিন্তু এই মাওবাদী সমস্যা দেশের অভ্যন্তরে এক সমস্যার জটিলতা কাটেনি বলেই এই ঘটনা। মাওবাদী নেতা কিষেণজির মৃত্যুর পর সমস্যা কমে আসার সম্ভাবনা প্রশাসন মনে করেছিল । কিন্তু তা একেবারেই যে কমেনি প্রশাসন এই ঘটনা দিয়ে দেখিয়ে দিল । মাওবাদী দমনের জন্য কোষাগার থেকে যে অর্থ ব্যয় করা হয় এই ঘটনার পর তার পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে, না কমবে তা এখনই বলা সম্ভব নয় । তবে মাওবাদী নেতাকে খতম করে দিলেই এই সমস্যা খতম হয়ে যাবে তা এত জোর দিয়ে বলা যায় কি ? আসলে সমস্যার উৎস খুঁজে বের করতে হবে সরকার ও প্রশাসনকে । সেই কারণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক হলে তা নির্মূল করা এখনো সম্ভব হল না কেন ? মাওবাদী সমস্যা জাতীয় সমস্যা বলে একজোট হয়ে লড়তে হবে বললে তা থেকে গুরুগম্ভীর আলোচনা চলতে পারে কিন্তু তা সমাধানের পথ হতে পারে না । মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় সকল সরকার ও তার প্রশাসন স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে সঠিকভাবে সার্ভে করে মাওবাদীদের আহ্বান করতে হবে সুস্থ আলোচনায় সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে । জনজাতি এলাকায় গেলে খালি চোখে বোঝা যায় সমস্যার গভীরতা । অথচ প্রশাসন জানে না । তা কেমন করে হয় ! মাওবাদীরা সরকার ও প্রশাসনের যে অন্ধ বিরুদ্ধাচরণ করে এই জায়গাটা ভেঙে দিতে হবে প্রশাসনকেই । বুঝিয়ে দিতে হবে বন্দুকের নলে সমাধান করা যায় না ।  
কিন্তু ছত্তিশগড়ের মাওবাদী হত্যার চলমান ও সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রশাসন প্রমাণ করে দিতে চাইছে বন্দুকের নলেই সমাধান । অথচ মাওবাদীর সর্বাধিনায়ক নেতার মাথার দাম দু'কোটি টাকা ঘোষিত ছিল । এই অবস্থায় মাওবাদীরা আলোচনায় বসতে চেয়েছিল বলে বিভিন্ন বাম সংগঠন দাবি করেছে । তাহলে মাওবাদী সংগঠনের সমস্ত খবর পেয়েও তাদের সাথে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা গেল না কেন ? এছাড়া অন্যান্য বাম সংগঠনের দাবি যে মাওবাদী হত্যার নামে সাধারণ জনজাতির মানুষজনের প্রাণ নিতে হচ্ছে কেন ? মাওবাদী হত্যার নামে জনজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সংগঠন দাবি তুলেছে । ভৌগোলিক অবস্থানে ছত্তিশগড়ের তথাকথিত এই মাওবাদী অঞ্চল খনিজ সম্পদ ও বনজ সম্পদে ভরপুর । এমন সম্পদে অধ্যুষিত অঞ্চলটি থেকে জনজাতিদের হঠিয়ে দিতে এই পরিকল্পনা কিনা তা চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে । মাওবাদীরা আলোচনায় যোগ দিতে রাজি হওয়ার পরেও হত্যা অভিযান সেই চর্চার রাস্তাকে আরো প্রশস্ত করেছে । যে মাওবাদীদের শ্লোগান 'বন্দুকের নল ক্ষমতার উৎস', সেই শ্লোগান রাষ্ট্র নিজেই ব্যবহার করছে তাঁর কাজে । প্রশাসন নিজেই সেই কাজ দিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করছে বলে বলা যায় কি ? এ প্রশ্নের উত্তর তা হলে তবে কাদের প্রয়োজনে !

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon



Tags: