বিয়ার ব্রাউন
প্রতি বছর ২ জুন পালিত হয় International Sex Workers' Day বা আন্তর্জাতিক যৌনকর্মী দিবস। এই দিনটি শুধুমাত্র একটি পেশার স্বীকৃতি নয়, বরং সেইসব মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো, যারা সমাজের গোঁড়ামি, বৈষম্য, এবং বৈধতা সংকটে থেকেও প্রতিদিন বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই দিনটির সূচনা হয় ১৯৭৫ সালে ফ্রান্সের লিয়নে। সেখানে প্রায় ১০০ জন যৌনকর্মী একটি গির্জায় জড়ো হয়ে তাদের উপর ঘটে চলা নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। পুলিশের হঠাৎ অভিযান, সামাজিক অবহেলা এবং আইনি নিরাপত্তার অভাবে তাঁদের জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। সেই প্রতিবাদ থেকেই জন্ম নেয় এই বিশেষ দিনটির, যা আজ বিশ্বব্যাপী যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ভারতের মতো দেশে যৌনকর্মীদের সংখ্যা লক্ষাধিক। কলকাতার সোনাগাছি যেমন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম রেড-লাইট এরিয়া, তেমনই রয়েছে মুম্বইয়ের কামাথিপুরা কিংবা দিল্লির জিবি রোড। কিন্তু এখানকার মানুষগুলোর অধিকাংশই সমাজের চোখে শুধুই "অবাঞ্ছিত"। তারা পেশার বৈধতা তো পায় না-ই, বরং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, এমনকি মানবাধিকার থেকেও বঞ্চিত।
অথচ এই পেশাও এক ধরনের শ্রম। যে সমাজে যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলাই লজ্জার, সেখানে যৌনকর্মীরা হয়ে পড়েন অচ্ছুৎ। অথচ খদ্দেররা আসেন সমাজের সব স্তর থেকেই। এই দ্বিচারিতা ও সামাজিক ভণ্ডামি যৌনকর্মীদের জীবন আরও অসুরক্ষিত করে তোলে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো স্বাস্থ্যসেবা। এই পেশায় যৌনরোগের ঝুঁকি থাকলেও, পর্যাপ্ত সচেতনতা ও চিকিৎসার সুযোগ অনেক ক্ষেত্রেই নেই। যদিও কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যেমন দুর্গা, স্নেহা, ও দুর্বার মহিলাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অধিকার নিয়ে কাজ করছে, তবুও সমাজের বড় অংশ এখনও উদাসীন।
আইনগত দিক থেকেও যৌনকর্মীদের অবস্থা জটিল। ভারতে স্বতঃস্ফূর্ত যৌনকর্ম পেশা নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু জনসমক্ষে দেহব্যবসা চালানো, খদ্দের সংগ্রহ, বা কোঠা চালানো আইনত দণ্ডনীয়। ফলে বাস্তবে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষরা প্রায়শই পুলিশের হয়রানির শিকার হন।
আজকের দিনে প্রয়োজন, যৌনকর্মীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। তাঁদের শুধুমাত্র দয়া নয়, দরকার সম্মান। দরকার আইনি স্বীকৃতি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সন্তানদের জন্য ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা। এই পেশায় যারা রয়েছেন, তাদেরও তো স্বপ্ন আছে, পরিবার আছে, জীবন আছে।
International Sex Workers’ Day তাই আমাদের মনে করিয়ে দেয় — তারা সমাজের বাইরের কেউ নয়, তারাও আমাদের মতো মানুষ। সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তার বুনিয়াদে গড়ে উঠুক সমতার সমাজ, যেখানে পেশা নয়, মানুষই মুখ্য।
অনুবাদ: পিয়া রায়